শ্রমজীবী শিশু সহায়তা উদ্যোগ
প্রসঙ্গে দু কথা--
২০০৫ সালে জনৈক ক্ষেতমজুর পরিবারের ক্যান্সার আক্রান্ত এক শিশু জয়ন্ত মান্নার অসহায়তার শরিক হয়ে আমরা গড়ে তুলেছিলাম শ্রমজীবী শিশু সহায়তা উদ্যোগ। ঐ উদ্যোগ বেশ কয়েক বছর সাফল্যের সঙ্গে চলার পর নানা কারণে তা স্তিমিত হয়ে আসে।
পরবর্তীকালে ২০১৯ সালে আরও একটি ঘটনা আমাদের নাড়া দেয়। জনৈক আইসক্রিম বিক্রেতা এক ফেরিওয়ালার হার্নিয়া অপারেশনের প্রয়োজন থাকলেও তিনি মূলত দুটি কারণে অপারেশন করাতে পারছিলেন না। প্রথমত, অপারেশনের খরচ, দ্বিতীয়ত অপারেশন জনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি থাকলে রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিকে বাড়িতে ওনার দুটি শিশু সন্তান।
উনি হাসপাতালে ভর্তি থাকলে শিশুদের সঙ্কট আসন্ন হয়।
এক্ষেত্রে শিশুরা সরাসরি আক্রান্ত না হলেও পরোক্ষভাবে তারাও আক্রান্ত হয়।
আমাদের ২০০৫-০৬ সালে নেওয়া উদ্যোগের বেশ কিছু টাকা, ব্যাঙ্কে গচ্ছিত ছিল । ঐ টাকা কাজে লাগিয় এবং উদ্যোগটি পুনরায় চালু করার উদ্দেশ্য আমরা ২০১৯ সালে আবার সচেষ্ট হই। বেশ কয়েকটি সভা করি। অনেকেই এগিয়ে আসেন।
কিন্তু ২০২০ সালের করোনা সংক্রমণ ও লকডাউনজনিত কারণে সেই উদ্যোগও থমকে যায়।
সম্প্রতি বাঁকুড়ার দিন মজুর বাপী রায়ের স্পাইনাল কর্ডের অপারেশনসহ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে আমরা উদ্যোগটি চালু রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। পুনরায় ঐ উদ্যোগটি চালু করার জন্য সকলের কাছে আবেদন করি। অনেকেই সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছেন, আসছেন ।
সদস্য হতে হলে
★ যে কোনো ভারতীয় নাগরিক সদস্য হতে পারেন।
★একটি সম্মতি সূচক ফর্ম পূরণ করেই সদস্য হওয়া যায়।
★ বার্ষিক সদস্য চাঁদা ১২০০ অথবা ৬০০ টাকা।
★টাকা নগদে /চেকে / আর টি জি এস করে ব্যাঙ্কে পাঠাতে পারেন। আর টি জি এস করলে স্ক্রিনশট দিতে হবে।
★ সদস্য হলে আপনিও কোনো শিশুর সহায়তায় একজন সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হবেন। আপনি কোনো শিশুর সহায়তায় সুপারিশও করতে পারবেন।
কারা পাবেন সহযোগিতা
★পনেরো বছরের নীচে অর্থনৈতিক ভাবে অতি অনগ্রসর শিশুরা এই প্রকল্পে সহায়তা পাওয়ার জন্য বিবেচনায় আসবেন।
★ অর্থনৈতিক ভাবে অতি অনগ্রসর পরিবারের শিশুর পিতা/মাতা বা শিশু যাঁর উপর নির্ভরশীল সেই অভিভাবক এই প্রকল্পে সহায়তার জন্য বিবেচনার আওতায় আসবেন।
★কেবলমাত্র শ্রমজীবী হাসপাতালের অন্তর্বিভাগে ভর্তি ও বহির্বিভাগে চিকিৎসা চলাকালীন রুগীরাই সহায়তা পাবেন।
বিশেষ ক্ষেত্রে কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিয়ম শিথিল করা যাবে।
★আবেদন করতে হবে নির্দিষ্ট আবেদন পত্রে। প্রয়োজনীয় সংশাপত্রসহ।
সংশাপত্র -
(কেবল প্রতিলিপি)
১) চিকিৎসার নথি।
২) চিকিৎসককের পরামর্শ পত্র।
৩) বয়সের প্রমাণপত্র
৪)বাসস্থানের সংশাপত্র
৫) উপার্জনের প্রমাণপত্র।
৬) শ্রমজীবী পরিবারের কোনো সদস্য বা বেলুড় শ্রমজীবী স্বাস্থ্য প্রকল্প সমিতির সমমনোভাবাপন্ন অরাজনৈতিক কোনো গণসংগঠনের সুপারিশপত্র।
৭) সমষ্টিগত উদ্যোগের পাশেও শ্রমজীবী শিশু সহায়তা উদ্যোগ থাকবে।
★আবেদন করার পর কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। সর্বক্ষেত্রেই কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। এবিষয়ে কোনোরূপ বাক্যালাপ /পত্রালাপ গ্রাহ্য হবে না।
শিশু সহায়তায় দু একটি কাজের উদাহরণ -
প্রিয়াঙ্কা রাজভড় ও লক্ষী দাসের পাশে
১) প্রিয়াঙ্কা রাজভড় (১৫/স্ত্রী) বাড়ি দিয়াড়া হুগলি। বাবা নেই, মা সুমিত্রা রাজভড় (৪০) একটি ছোট কারখানায় কাজ করেন। সাপ্তাহিক বেতন সপ্তাহে ২৫০ টাকা। স্বাস্থ্য স্বাথী কার্ড আছে কিন্তু তাতে বহির্বিভাগে চিকিৎসার বিধি নেই।
২) লক্ষী দাস (১৪/স্ত্রী) । বাড়ি শেওড়াফুলি,হুগলী। মা-বাবা নেই। মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করতেই কেঁদে ফেলে। দাদা সুকু দাস(২৩) -র কাছে থাকে। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড নেই। দাদা দিনমজুর বার্ষিক রোজগার আনুমানিক ১৫০০০ টাকা।
দুজনেই বর্ণপরিচয়ের ছাত্রী। বর্ণপরিচয় শেওড়াফুলি স্টেশনে আর্থিকভাবে অতি দূর্বল বা পথশিশুদের পঠনপাঠন ব্যবস্থা করে। বর্ণপরিচয় শিশু দুটির স্ত্রী রোগ জনিত কিছু সমস্যার চিকিৎসার জন্য শ্রমজীবী শিশু সহায়তা উদ্যোগ-এর কাছে আবেদন জানায়।
আবেদনে সাড়া দিয়ে শ্রমজীবী শিশু সহায়তা উদ্যোগ ঐ দুই শিশুর চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়। শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নির্মাল্য ভট্টাচার্য শিশু দুজনকে পরীক্ষা করেন। কিছু ওষুধ দেন ও কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। পরবর্তী চিকিৎসার দায়িত্ব ও শ্রমজীবী শিশু সহায়তা উদ্যোগ নেয়।
লাখি কৌরের পাশে
বছর পাঁচেকের কৃষ্ণ সিং। আাসানসোলে থাকত বাবা মায়ের সঙ্গে। চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। বাবা করণ সিং যানবাহনের গায়ে ছবি আঁকার কাজ করতেন। সামান্য আয়, কিন্তু চলে যেত। লকডাউন কালে অনেকের মতোই করণ সিং কাজ হারান। চরম দূর্দশার মধ্যে পড়ে করণের পরিবার। আচমকা ২০২০ সালে অসুস্থ হয়ে পরেন করণ সিং। সেপ্টেম্বর মাসে মারা যান প্রায় বিনা চিকিৎসায়।
কৃষ্ণ সিংকে নিয়ে ওর মা লাখি কাউর চলে আসেন ব্যান্ডেলে ভাইয়ের আশ্রয়ে। কৃষ্ণর লেখাপড়ায় ইতি পড়ে। ভাই সুখদেও সিং টিউশানি করে সংসার চালান। নলডাাঙার ব্যান্ডেল বাজারে একটা ভাড়া বাড়িতে থাকেন। নিজে বিয়ে করেছেন। সাত বছরের এক শিশুসন্তান আছে। আরও এক দিদি আছেন,চোখে দেখতে পান না। বাবা নেই। মা আছেন।
বর্তমানে লখি কাউরের জরায়ুমুখে টিউমার ধরা পড়েছে। দ্রুত অপারেশন প্রয়োজন। কিন্তু আর্থিক কারণে অপারেশন সম্ভব হচ্ছিল না।
শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে গাইনেকোলজি বিভাগে দেখাতে এসে জানতে পারেন শ্রমজীবী শিশু সহায়তা উদ্যোগ-র কথা। যোগাযোগ করেন এক সদস্যের সাথে। ঐ সদস্য আবেদন করার পরামর্শ দেন। শ্রমজীবী শিশু সহায়তা উদ্যোগের ঘোষিত নীতি অনুযায়ী পনেরো বছরের নীচে অর্থনৈতিক ভাবে অতি অনগ্রসর শিশুরা এই প্রকল্পে সহায়তা পাওয়ার জন্য বিবেচনায় আসবেন। অর্থ নৈতিক ভাবে অতি অনগ্রসর পরিবারের শিশুর পিতা/মাতা বা শিশু যাঁর উপর নির্ভরশীল সেই অভিভাবক এই প্রকল্পে সহায়তার জন্য বিবেচনার আওতায় আসবেন। বিশেষ ক্ষেত্রে নিয়ম শিথিল করার সুযোগ কমিটির হাতে থাকবে।
আবেদন করার পর শ্রমজীবী শিশু সহায়তা উদ্যোগের সদস্যরা দ্রুত আলোচনা করে সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
মোট খরচের সত্তর শতাংশই বহন করে শ্রমজীবী শিশু সহায়তা উদ্যোগ। এই সহায়তার কথা জেনে, আবেগ ধরে রাখতে পারেন না সুখদেও।জানান খুব উপকার হল। নাহলে দিদির অপারেশন হয়তো করাতেই পারতাম না।
গত ৩১ মে ২০২২ শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে অপারেশন হয় লাখী কৌরের। এখন আরোগ্যের পথে।
পল্লবীর পাশে
পল্লবী পাল, বয়স চার। বাড়ি সর্দার পাড়া, ছোটবেলু, শ্রীরামপুর, হুগলী।শিশুটি শৈশবে কঠিন শারীরিক সমস্যায় কথা বলা ও কানে শোনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।বহু জায়গায় পল্লবীর বাবা বিলটু পাল (৩০) ঘোরাঘুরি করে পল্লবীর চিকিৎসার চেষ্টা করে। অবশেষে বনহুগলীর ALI YAVAR JUNG NATIONAL INSTITIUTE OF SPEECH AND HEARING DISABILITIES (DIVYANGJAN), REGIONAL CENTRE, KOLKATA জানায় পল্লবীর1) Speech and language stimulation therapy
2) hearing Aid প্রয়োজন। পেশায় টোটোচালক বিল্টু পাল খোঁজ খবর করে পল্লবীকে ব্যান্ডেল প্রতিবন্ধী কল্যাণ কেন্দ্রে স্পিচ থেরাপির জন্য ভর্তি করান। কিন্তু হেয়ারিং এড কিনতে প্রয়োজন হয় প্রায় বাষট্টি হাজার টাকা। ঐ টাকা খরচ করার সামর্থ্য বল্টু বাবুর না থাকায় ব্যান্ডেল প্রতিবন্ধী কল্যাণ কেন্দ্র শ্রমজীবী শিশু সহায়তা উদ্যোগ-র সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেয়। বিল্টু বাবু, সেই মোতাবেক যোগাযোগ করলে শ্রমজীবী শিশু সহায়তা উদ্যোগ প্রথমে বিনামূল্যে সরকারি সহযোগিতায় হেয়ারিং এড পাওয়ার চেষ্টা চালায়। কানাইপুর হেলথ সেন্টারে RBSK স্কিমের আন্ডারে শিশুটির নাম লেখানো হয়। রাজ্যের RBSK এর এক সচিবের সাথেও কথা বলা হয়। কিন্তু তিনি স্পষ্টতই বলেন, "হিয়ারিং এইড পেয়ে যাবে কিন্তু ৩ থেকে ৬ মাস সময় লাগবে, তারও বেশি লাগতে পারে, এই ব্যাপারে আমাদের করণীয় কিছু নেই।"
এমত অবস্থায়, বিল্টু পালের শিশু কন্যা যেহেতু স্কুলে ভর্তি হয়ে গেছে, অন্তত একটি হিয়ারিং এইড দ্রুত প্রয়োজন, না হলে বধিরতার কারণে শিশুটির সার্বিক বিকাশ ব্যাহত হবে।এরপরই হিয়ারিং এইডটি কেনার ব্যাপারে শ্রমজীবী শিশু সহয়তা উদ্দ্যোগ সক্রিয় হয়। মোটমূল্যের পঞ্চাশ শতাংশ খরচ শ্রমজীবী শিশু সহায়তা উদ্যোগ বহন করার সিদ্ধান্ত নেয়।
সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ একত্রিশ হাজার টাকার চেক JOY FOUNDATION AND RESEARCH INSTITUTION - অনূকূলে বিল্টু পালের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আশাকরি এই সহযোগিতা শিশুটির বিকাশে সহায়ক হবে।
শ্রেয়ার পাশে
শ্রেয়া পাল ( ১৪)
পেশাঃ ছাত্রী (অষ্টম শ্রেণী) লালবাগান বালিকা বিদ্যালয়।
পিতা - দিলু পাল (৪২)।
ঠিকানা - শঙ্করবাটি, অনন্তপুর, খলিসানি,চন্দননগর, হুগলী -
৭১২১৩৮।
পিতার পেশা - টোটোরিকশা চালক
বার্ষিক আয় - একলক্ষ টাকা মাত্র।
অসুখঃ জরায়ুমুখে সিস্ট হয়েছে। অপারেশন প্রয়োজন কিন্তু বর্তমানে অপারেশনের আগে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা প্রয়োজন।
শিশু সহায়তা উদ্যোগে আবেদন করার পরে, আলোচনা করে ২৭৫০/- সহায়তা প্রাথমিক ভাবে দেওয়া হয়।
পরে অষ্টমশ্রেণীতে পাঠরত শ্রেয়া পালের জরায়ুর টিউমার, শিশু সহায়তা উদ্যোগের মাধ্যমেন নিঃখরচায় শ্রীরামপুর শ্রমজীবীতে সফল হবে অপারেশন হয় এবং সে সম্পূর্ণ ভাবে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যায়। শ্রেয়া পালের মা ও বাবা এই উদ্যোগ ও তার সাথে থাকা সকল মানুষদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন।
বিশ্বজিৎ দাসের পাশে
গত ৭ জুলাই ২০২২, অন্য দিনের মতোই টোটো নিয়ে বেড়িয়েছিল ৩/১৫৬ মাহেশ কলোনি, শ্রীরামপুর,হুগলীর বাসিন্দা বিশ্বজিৎ সরকার। বাড়িতে ৬ বছরের শিশু কন্যা, যে কথা বলতে পারে না। সদ্য মেডিকেল কলেজে একটা অপারেশনও হয়েছে কণ্ঠনালীর। স্ত্রী পলি সরকার এবং বৃদ্ধ বাবা মা। জীবিকার একমাত্র অবলম্বন টোটোটি সম্প্রতি কিনেছেন। অর্থের সংস্থান হয়েছে কিছুটা মায়ের গহনা বিক্রি করে কিছুটা ঋণ নিয়ে। শিশুকন্যার চিকিৎসা বাবদও বেশ কিছু ঋণ থেকে গেছে পরিচিতদের কাছে।
মাহেশ বোসপাড়া বাজারে দুই আরোহী হাত দেখিয়ে টোটো থামান। বলেন শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে ভর্তি রুগীকে বাড়ি নিয়ে যাব। যাবে তুমি? বিশ্বজিৎ রাজি হয়। সাড়ে বারোটা নাগাদ শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে পৌঁছে তথাকথিত সেই রুগী বাড়ির লোক জানায়, ঘন্টা খানেক সময় লাগবে, তুমি কিছু খেয়ে নাও। পঞ্চাশ টাকা খাওয়ার জন্য দেয়ও। বিশ্বজিৎ হাসপাতালের উল্টোদিকের হোটেলে ভাত খায়। কিন্তু খেয়ে এসে দেখে তথাকথিত সেই রুগীর বাড়ির লোকও নেই টোটো গাড়িটিও নেই। অথচ গাড়ির চাবি বিশ্বজিৎ পকেটেই রেখেছিল। বিভ্রান্ত হয়ে খানিক খোঁজাখুঁজি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বেলা দেড়টা নাগাদ জানান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দ্রুত সাধ্যমতো খোঁজার পর ফোনে পুলিশকে জানান। বিশ্বজিৎকেও থানায় পাঠান।বিশ্বজিৎ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সন্ধ্যায় পুলিশ তদন্তেও আসে। কিন্তু টোটো গাড়িটি উদ্ধার করা যায়নি।
এমত অবস্থায় কেপমারির স্বীকার বিশ্বজিতের অসহায় অবস্থার কথা বিবেচনা করে আমরা শ্রমজীবী শিশু সহায়তা উদ্যোগ চেষ্টা করে বিশ্বজিতের পাশে দাঁড়ানোর। আমরা বিশ্বজিৎকে একটি নতুন টোটো কিনে দিতে চেয়ে সব বন্ধুর মানবিক সাহায্যের উপর নির্ভর করে আবেদন করি সবার কাছে সাধ্যমতো আর্থিক সহযোগিতার।
আমাদের বিশ্বাস ছিল বিশ্বজিৎ সরকারের শিশুকন্যার কথা ভেবে সকলে সাড়া দেবেন আবেদনে।
দেনও। দুদিনের মধ্যেই আমরা নতুন টোটো তুলে দিই বিশ্বজিতের হাতে।
বিজনের পাশে
বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত এক গ্রাম থেকে শ্রীরামপুরে শ্রমজীবী বিদ্যালয়ে পড়তে এসেছিল ছোট্ট বিজন। বাড়িতে শুধু মা। মায়ের রোজগারের কোনো স্থিরতা নেই। কোনো ক্রমে একবেলা জোটে তো আরেক বেলা উপবাস। কিন্তু বড় কল্পনা প্রবণ বিজন। বানিয়ে বানিয়ে নানান মজার গল্প বলে ঐ ছোট্ট বয়সেই। পাঁচটা হাতিকে শূন্যে উড়তে দেখার গল্প... একটা গরু একটা কুমিরকে কিভাবে খেয়ে নিল, সেই গল্প... জঙ্গলে উড়াকল (উড়োজাহাজ) নামার গল্প...। শ্রমজীবী বিদ্যালয়ের অন্য শিশুরা বিজনের গল্প শোনে,মজা পায়, সবচেয়ে পুঁচকে হওয়ায় আগলেও রাখে। ২০১৫ সালে শ্রমজীবী বিদ্যালয় সরে যায় বালিতে, বড় এক বাড়িতে। শ্রীরামপুরে স্থানাভাব ঘটছিল। নাম হয় শ্রমজীবী পাঠশালা। বিজনও বালি যায়। ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে, আর পাঁচটা স্বাভাবিক শিশুর মতোই।
কিন্তু আচমকাই বিজনের একটি পা আক্রান্ত হল ক্যান্সারে, অনেক চেষ্টা করেও বাঁচানো গেল না পা। অপারেশন করে বাদ দিতে হল।
আপাতত একটি পা ছাড়ায় বিজন মোটামুটি সুস্থ। তবে নিত্য সঙ্গী ক্রাচ। সারাদিন নানা কাজে থাকে বিজন, শারীরিক অসুস্থতাকে উপেক্ষা করেই।
এখন বিজনের প্রয়োজন একটা কৃত্রিম পা। তাতে ওর সুবিধা হবে খানিকটা। বনহুগলীর সরকারি হাসপাতালে গিয়েছিল বিজনের পাঠশালার বন্ধুরা। চিকিৎসক দেখেলেন।পা, পাওয়া যাবে মাপজোক হয়ে গেল। কিন্তু বিনামূল্যে পেতে হলে প্রয়োজন প্রতিবন্ধী শংসাপত্র, আয়ের প্রমাণপত্র ও নানাবিধ নথিপত্র।
তা কে দেবে বিজনকে প্রতিবন্ধী শংসাপত্র? যার অভিভাবকের রোজগারের স্থিরতা নেই, সে কোথায় পাবে রোজগারের শংসাপত্র? অন্যথায় প্রয়োজন ১১৫০০ টাকা। তাহলে মিলবে কৃত্রিম পা।
শিশু সহায়তা উদ্যোগে আবেদন করে বিজনের বন্ধু সবুজ, মানস। শিশু সহায়তা কোর কমিটি দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয় দেওয়া হবে বিজনের কৃত্রিম পা বাবদ সমস্ত খরচ।
সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক দিয়ে দেওয়া হয় পুরোটাকাটাই।
দু-এক দিনের মধ্যেই বিজন পেয়ে যাবে তার নতুন পা।
শ্রমজীবী শিশু সহায়তা উদ্যোগের সকল বন্ধুকে বিজন তার ভালবাসা জানাতে বলেছে।
কবিতার কথা
কবিতার সমস্যার প্রকৃতি খানিকটা ভিন্ন। গত ০২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ সন্ধ্যায় আমরা খবর পাই সকাল ৬টা নাগাদ বৈদ্যবাটী নিবাসী জনৈক কবিতা (নাম পরিবর্তিত)-র একটি সন্তান ভূমিষ্ট হয়েছে। কবিতা বছর উনিশের ছাত্রী। অবিবাহিতা। কবিতার অভিভাবকরা জানান এ বিষয়ে কবিতা বা তাঁর অভিভাবকরা কোনো রকম আগাম পূর্বাভাস পাননি। শিশুটি ভূমিষ্ট হওয়ার পরেই পরেই কবিতাকে তাঁর অভিভাবকেরা শ্রীরামপুরের একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে ভর্তি করালেও, শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি বা কোনো চিকিৎসক দেখানোর প্রয়োজনও বোধ করেননি। ওঁরা ধরে নিয়েছিলেন শিশুটি হয়ত মারাই গেছে বা যাবে।
ঘটনার কথা জানতে পেরেই শ্রমজীবী শিশু সহায়তা উদ্যোগের পক্ষ থেকে কবিতার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে অবিলম্বে শিশুটিকে মায়ের সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করার অনুরোধ করি। কিন্তু কবিতার বাবা যুক্তি দেখান, এতো দেরিতে নার্সিংহোম যদি শিশুটিকে ভর্তি না নেয়...।
আমরা ঐ বেসরকারি হাসপাতালের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করি ও শিশুটিকে ভর্তি নেওয়ার আবেদন করি। নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষ রাজি হন এবং ভর্তি নেন।
পরের দিন, ৩ তারিখ কবিতা কিছুটা সুস্থ হলে শিশুটির বাবার নপরিচয় জানায়। বাবা পাশের পাড়ার বছর কুড়ির এক তরুণ ছাত্র।
দুপুরেই ঐ তরুণের বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করলে ওর বাবা প্রভূত প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু শিশুটির অস্তিত্ব মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে বারংবার টালবাহানা করতে থাকেন। কবিতার বাবাও সুযোগ বুঝে সব দায় ঐ তরুণের বাবার ঘাড়ে চাপিয়ে নিষ্কৃতি পেতে চান। দফায় দফায় আলোচনা হয়। নানা সামাজিক সমস্যার কথা ওঠে। শেষে পাঁচ তারিখ দুপুর ০২ টো নাগাদ দুই পরিবার সম্মিলিত ভাবে স্থির করেন, কবিতা ও তরুণ যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই হবে। অর্থাৎ চাইলে শিশুটি ছাড়াই ওঁরা ভবিষ্যতে একসঙ্গে থাকতে পারবেন।
ঐ আলোচনায় অংশগ্রহণকারী শ্রমজীবী শিশু সহায়তা উদ্যোগের সদস্য গৌতম সরকার বলেন, তাহলে আমাদের আরও আঠারো বছর অপেক্ষা করতে হবে। কেননা, শুধু কবিতা বা ঐ তরুণ কেন? শিশুটিরও মতামত নেওয়া দরকার। আর আমাদের আইন বা সংবিধান এই অধিকার দেয়নি, ইচ্ছে হল বাচ্চা করলাম আর ইচ্ছে হলেই তাকে রাস্তায় ককুর বিড়ালের বাচ্চার মতো ছেড়ে দিলাম।কিছু কথা কাটাকাটি হয়,আমরা প্রশাসনে অভিযোগ জানানোর কথা বলি।আইন মোতাবেক যা হওয়ার তাই হবে বলে জানিয়ে দিই। তবে এই প্রতিশ্রুতিও দিই, প্রয়োজনে প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে ও আমাদের সংগঠনের আভ্যন্তরীণ আলোচনা সাপেক্ষে শিশু ও মাকে কিছু দিন শ্রমজীবী শিশু সহায়তা উদ্যোগের ব্যবস্থাপনায় সাময়িক আশ্রয় দেওয়া যেতে পারে। অন্যথায় পুলিশ প্রশাসনের দারস্থ হতে হবে বলে জানিয়ে দিই।
অবশেষে দুই পক্ষই শিশুটিকে মেনে নেবেন বলে জানান।
কিন্তু বিকালে শিশুটি ও তার মা কোথায় থাকবে তা নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হলে হুগলী জেলা চাইল্ড লাইনের হুগলী জেলা কো-অর্ডিনেটরকে পুরো বিষয়টি জানাই।
সন্ধ্যায় চাইল্ড লাইন সক্রিয় হওয়ার পরেই দুই পরিবার মা ও শিশুর দায়িত্ব নিতে রাজি হয়। হাসপাতাল থেকে শিশু ও মাকে ঐ তরুণের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। স্থির হয়, আপাতত সামাজিক বিবাহ হবে।কয়েকমাস পরে রেজিস্ট্রি করা হবে বলে স্থির হয়।
১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ আবাও একটি জটিলতা দেখা দেয়,
শিশুটির জন্মের শংসাপত্র পাওয়া নিয়ে কিছু জটিলতা তৈরি হয়। কবিতার বাবা গতকাল (১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩) রাতে শিশু সহায়তা উদ্যোগকে জানান শ্রীরামপুরের নার্সিংহোম যে তথ্য বৈদ্যবাটী পৌরসভায় পাঠিয়েছে তাতে শিশুটির জন্ম বাড়িতে হয়েছে বলে উল্লেখ করা আছে। তাতে পৌরসভার বক্তব্য, কোনো একজন ডাক্তারবাবুর ত্বত্ত্বাবধানে শিশুটি জন্মেছে সেটা সেই ডাক্তারবাবুকে লিখে দিতে হবে। মুশকিল হল, শিশুটি কোনো চিকিৎসকের অধীনে তো জন্মায়নি!
শ্রমজীবী শিশু সহায়তা উদ্যোগের পক্ষ থেকে বৈদ্যবাটী পৌরসভার পৌরপ্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যাটির সমাধান করা হয়। পৌরপ্রধানকে আমরা অনুরোধ করে বলি, গ্রাম বাংলার বহু শিশুই প্রতিদিন জন্মায় নথিভুক্ত চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান ছাড়াই। তাঁরাও জন্মের শংসাপত্র পান। সুতরাং বিশেষ পরিস্থিতিতে এই শিশুটিকেও শংসাপত্র দেওয়া হোক।অন্যথায় নির্দোষ শিশুটি ভবিষ্যতে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হবেন। যা অত্যন্ত অমানবিক হবে। পৌরপ্রধান আমাদের যুক্তি মেনে নেন ও শিশুটিী জন্মের শংসাপত্র দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ শ্রমজীবী শিশু সহায়তা উদ্যোগের সদস্যদের উপস্থিতিতে কবিতা ও তরুণের বিবাহ সম্পন্ন হয়। শিশুটিও পিতামাতার সান্নিধ্যেই বেড়ে ওঠার সুযোগ পান।
যা শিশু সহায়তা উদ্যোগের এক বড় সাফল্য।
অয়ন আদকের পাশে
অয়ন আদক- (১১/ পুরুষ) পেশা:ছাত্র ( পঞ্চম শ্রেণী)
পিতা - অভিজিৎ আদক
পেশা - কাঠমিস্ত্রী
বাৎসরিক আয় - ষাট হাজার টাকা( আনুমানিক)।
মাতা- মুনমুন আদক
পেশা গৃহবধূ।
ঠিকানা - গ্রাম: গঙ্গাধরপুর।
ডাক: গঙ্গাধরপুর বাজার।
থানা: চন্ডীতলা।
জেলা: হুগলী। পিন কোড- ৭১২৩০৬।
অভিজিৎ- মুনমুনের একমাত্র সন্তান থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত। মাসে দুবার / তিনবার রক্ত নিতে হয়। কিন্তু সম্প্রতি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অবিলম্বে প্লীহার অপারেশন প্রয়োজন। সরকারি হাসপাতালের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন বেশ কিছু দিন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ মুনমুন দেবী ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে। ডাক্তার শুভাশিস কোলে দেখেন। উনিও পরামর্শ দেন অপারেশনের।পরে ডাক্তার অনিল সাহা দেখে কিছু পরীক্ষা করতে দেন।পরেরদিন সকাল আটটার সময় সেগুলো হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা অপারেশন ও হাসপাতালের খরচ বাবদ আনুমানিক পনের হাজার টাকা মতো খরচ হবে।
কিন্তু অভিজিৎ বাবুর সামর্থ্য নেই ঐ অর্থ জোগাড় করার। সামান্য রোজগার। সঞ্চয় যা ছিল তা গেছে লকডাউনে।
শ্রমজীবী শিশু সহায়তা উদ্যোগের কাছে আবেদন করেন
শ্রমজীবী শিশু সহায়তা উদ্যোগ প্রাথমিক ভাবে পরীক্ষা নীরিক্ষার জন্য প্রায় দুজার পাঁচশত টাকা সহযোগিতা করে। অপারেশন হলেও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সুরজিতের পাশে
সুরজিৎ দাস
বয়স ৮ বৎসর / পুরুষ
পেশা-ছাত্র (তৃতীয় শ্রেণী)
পিতা - মিগেল দাস, (২৯)
পেশা- রাজমিস্ত্রীর যোগাড়ে
মাসিক আয় - চার হাজার টাকা। ( আনুমানিক)
ঠিকানা - প্রভাস নগর, মল্লিকপাড়া শ্রীরামপুর, হুগলী।
সুরজিৎ দাসের অন্ডকোষ অসমান ও ত্রুটিযুক্ত হওয়ার কারণে অপারেশন প্রয়োজন হয়। সুরজিৎ শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে ভর্তি হন গত ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩। অপারেশন হয় ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ছিল। ২১ ফেব্রুয়ারী ২০৩২ ছুটি হয়। ছুটির সময় জানা যায় কার্ড থেকে পাওয়া যাবে ১০,২৬০ টাকা। কিন্তু অপারেশনে হাসপাতালের খরচ হয়েছে ২০,০৬০।
বাকি টাকা যোগাড় করার সামর্থ্য হতদরিদ্র মিগেলবাবুর ছিল না। ছিলনা তেমন যোগাযোগ বা পরিচিতি যাতে টাকার সুরাহা হতে পারে। আবার তেমন বলিয়ে কইয়েও তিনি নন কাজেই চুপচাপ সরে যান, চেষ্টা করেন টাকার যোগাড় করার। কিন্তু টাকার সংস্থান হয় না। যা নজরে আসে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের এক কর্মীর। তিনি পরামর্শ দেন শ্রমজীবী শিশু সহায়তা উদ্যোগে আবেদন করতে। ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ সকাল এগারোটা নাগাদ মিগেল বাবু শ্রমজীবী শিশু সহায়তা উদ্যোগে আবেদন করেন। শিশু সহায়তা উদ্যোগের কার্যকরী সমিতি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ৯৮০০ টাকা আর্থিক সহায়তা মঞ্জুর করে।২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ সুরজিৎ বাড়ি যায়। বাড়ি যাওয়ার সময় হাসপাতালের কর্মীরা খেলনা উপহার দেন ওকে। গত কাল ২১ ফেব্রুয়ারী সুরজিতের জন্মদিন ছিল কিনা!
প্রসঙ্গত একটি অপারেশন হয়েছে সুরজিতের আরও একটি করা দরকার।
আবারও হয়ত ওর সহায়তা প্রয়োজন হবে।
প্রসঙ্গত
যাঁরা গত শিশুসহায়তা উদ্যোগে সমিল আছেন আশা করি আগামী দিনেও তাঁরা একই ভাবে সক্রিয় থাকবেন।
এবং নতুন বন্ধুরা যাঁরা সামিল হতে চাইবেন, অবশ্যই যোগাযোগ করবেন।
পশাপাশি এই বার্তাটি অন্য বন্ধুদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার বিশেষ অনুরোধ রইল।
ব্যাঙ্কের বিবরণ -
SRAMAJIBI SHISSHU SAHAYATA UDYOG
A/O NO. 30065448115
STATE BANK OF INDIA
BALLY BRANCH
IFSC CODE - SBIN0003882
অভিনন্দনসহ
বনানী ভট্টাচার্য
বাসুদেব ঘটক
গৌতম সরকার
সৌরভ দত্ত
বিভাস গুপ্ত
সঞ্চারী গোস্বামী
০১ মার্চ ২০২৩
Copyright © 2024 SRAMAJIBI Hospital . - All Rights Reserved.
We use cookies to analyze website traffic and optimize your website experience. By accepting our use of cookies, your data will be aggregated with all other user data.