১৯৭৯- গঙ্গার পশ্চিমতীরে হাওড়া জেলার বেলুড়-এ, জিটি রোড সংলগ্ন ২২ বিঘা জমিতে ছিল ইন্দোজাপান স্টিলস্ লিমিটেড । কারখানাটি লাভ জনক হলেও মালিকি অদক্ষতা ও অপটু পরিচালনার কারণে মাঝে মাঝেই সংকটাপন্ন হয়ে পড়ছিল । নানান আশঙ্কা থেকেই কারখানার শ্রমিকবৃন্দ গড়ে তোলেন মডার্ন কো-অপারেটিভ ইন্ডাস্ট্রিয়াল সোসাইটি লিঃ। আকুপাংচার সূচ ও আকুপাংচার চিকিৎসার অন্যান্য সরঞ্জাম উৎপাদন শুরু হয়। ভাবনা ছিল অসময়ে বন্ধ হলে লড়াই এর পাশাপাশি শ্রমিকের দু-বেলা দু-মুঠো অন্নের সংস্থান করা, কেননা খালি পেটে লড়াই করা যায় না। মডার্ন কো-অপারেটিভ নিবন্ধিকৃত হয় ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭৯ তারিখে।
১৯৮০- মডার্ন কো-অপারেটিভ-এর উৎপাদিত পণ্য প্রথম বাজারজাত হল। সেই সময় কেবলমাত্র আকুপাংচার সূচ তৈরী হত।
শ্রমিক কর্মচারী তাদের পরিবার এবং বন্ধুজনের সহযোগে গড়ে তোলেন'ইন্দোজাপান স্টিলস্ কর্মী কলা পরিষদ' নামের সাংস্কৃতিক চর্চার সংগঠন। পরবর্তীতে এই সংগঠন 'শ্রমজীবী কলা পরিষদ' নামে পরিচিত হয়।
বিপুল চক্রবর্তীর প্রথম গানের রেকর্ড প্রকাশ করে ইন্দোজাপান স্টিলস্ লিমিটেড এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন।
১৯৮১- আকুপাংচার চিকিৎসার বিভিন্ন সরঞ্জাম উৎপাদন এবং বাজারজাত করা শুরু করে মডার্ন কো-অপারেটিভ।
১৯৮২- ঐতিহাসিক জুনিয়ার ডাক্তার অন্দোলন। এ আন্দোলনের কিছু পড়ুয়া ডাক্তার ও ডাক্তারদের সংগঠন পিপল্স্ হেলথ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের চিকিৎসকেরা ইন্দো জাপান স্টীল লিমিটেড-এর শ্রমিক কর্মচারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করতেন।
১৯৮৩- ইন্দো জাপান স্টীলস্ লিমিটেড এমপ্রয়ীজ ইউনিয়ন ও পিপলস্ হেলথ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মিলিত উদ্যোগে 'শ্রমজীবী স্বাস্থ্য প্রকল্প সমিতি' গঠন।
২রা অক্টোবর বেলুড়ের খামারপাড়া জাগৃতি হিন্দী বিদ্যামন্দির প্রাঙ্গণে শ্রমজীবী স্বাস্থ্য প্রকল্পের কাজ শুরু । এলাকার মানুষজন, শ্রমিক কর্মচারী, চিকিৎসক, পড়ুয়া সহ সকলের অংশগ্রহণে প্রাত্যহিক সান্ধ্য বহির্বিভাগ, এলাকার জঞ্জাল সাফাই, স্বাস্থ্য আলোচনা, সাংস্কৃতিক চর্চা ইত্যাদি প্রাথমিক কাজকর্ম শুরু। প্রধান উদ্যোক্তা ডাঃ অনিল সাহা, ডাঃ রণজিৎ ঘোষ, ডাঃ প্রদীপ মাইতি সহ অন্যান্য ডাক্তার ও ডাক্তারি পড়ুয়া এবং ইন্দো জাপান স্টিলস্ লিঃ এর অগ্রণী শ্রমিকবৃন্দ।
১৯৮৪- খামারপাড়া জাগৃতি হিন্দী বিদ্যামন্দিরে বাৎসরিক শল্য চিকিৎসা শিবিরের শুরু এবং সমাজের দুর্বলতর অংশের সহায়তায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে একযোগে ছোটোখাটো অস্ত্রোপচার,স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু।
১৯৮৫- বাঁকুড়া জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম মধুকুন্ডায় লোকাল অ্যানেসথিসিয়ার সাহায্যে অস্ত্রোপচার এবংস্বাস্থ্য ক্যাম্প।
১৯৮৬- ১লা মে তারিখে রক্তদান উৎসবের শুরু যা আজও বেড়ে চলা উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৮ থেকে এই কর্মসূচী বেলুড় নেতাজী জন্মোৎসব কমিটির সাথে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে।
১৯৮৮- স্থানাভাবে এবং ভিড়ের কারণে স্বাস্থ্যকেন্দ্র বেলুড় স্টেশন সংলগ্ন নিস্কো কারখানায় স্থানান্তরিত হয় ওখানকার বামপন্থী ইউনিয়নের সহায়তায় । সান্ধ্য বহির্বিভাগ ছাড়াও ওখানে একটি ছোটোখাটো আস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা ছিল। পুর্ণোদ্যমের এই কর্মযজ্ঞ চিকিৎসকদের মধ্যে শুভাশিস ঘোষ, শুভাশিস কোলে, ভূবন পাল, শক্তি প্রধান, অনিল সাহা এবং পল্লব দাশের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য ।
১৯৮৯- ১৮ই জুলাই শ্রমজীবী হাসপাতালের সবার প্রিয় ডাঃ রণজিৎ ঘোষ চলে গেলেন। সাথীদের আন্তরিক প্রচেষ্টা, মিলিত লড়াই বাঁচাতে পারেনি তাকে। শ্রমজীবীর গড়ে ওঠার পথে এক কাছের মানুষের এই অকস্মাৎ চলে যাওয়া ছিল বাস্তবিক এক অপূরণীয় ক্ষতি।
ঐ বছরেই শ্রমজীবী-র এক্সরে বিভাগ শুরু । বর্তমানে প্রয়াত শম্ভুনাথ (বাচ্চু) ব্যানার্জী তাঁর নিজস্ব এক্স-রে মেশিনটি নিয়ে আসেন শ্রমজীবী হাসপাতালে। শুরু হয় গুরুত্বপূর্ণ নিরীক্ষণ ব্যবস্থা।
১৯৯০- নিস্কো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অপারেশন থিয়েটার ও অস্ত্রোপচার শুরু যার দ্বারা শ্রমজীবী/সাধারণ মানুষদের সামনে চিকিৎসার এক নতুন দরজা খুলে যায়।
১৯৯১- 'বেলুড় শ্রমজীবী স্বাস্থ্য প্রকল্প সমিতি'র নিবন্ধীকরণ সম্পন্ন হয়। লোকাল অ্যানেসথিসিয়া সহ অস্ত্রোপচার ক্যাম্প সংঘটিত হয়।
১৯৯২- শ্রমজীবী মেলা - জাতি, ধর্ম, দলমত নির্বিশেষে দুর্বলতর শ্রেণীর মানুষজনকে বিশেষ করে কুটির শিল্প এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এই মেলা। সামাজিক সচেতনতার পক্ষে এবং অন্ধ বিশ্বাস-কুসংস্কার-এর বিপক্ষে এই মেলা।
১৯৯৩- বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের সাথে একযোগে পিছিয়ে থাকা গ্রামীণ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পরিষেবা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা পৌঁছে দিতে মোবাইল হেলথ সেন্টার-এর কাজ শুরু ।
১৯৯৪- এক ঐতিহাসিক বছর। নিস্কো এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের অনাগ্রহে স্থানান্তরিত হয়ে ইন্দো-জাপান সংলগ্ন গ্র্যান্ড স্মিথি ওয়ার্কস-এর পরিত্যক্ত জীর্ণদশা বাড়িটির সংস্কারসাধন করে শ্রমজীবী মানুষের শ্রমে ঘামে আবেগে ভালবাসায় শ্রমজীবী হাসপাতালের পথ চলা শুরু ১লা মার্চ, ১৯৯৪ - সাধারণ বহির্বিভাগ ও ৫ শয্যার অন্তর্বিভাগ নিয়ে। অন্তর্বিভাগে অপারেশন ইত্যাদির জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, অপারেশন টেবিল, আলো তৈরি করে নিলেন শ্রমিক বন্ধুরা নিজেদের চেষ্টায় নিজেরাই।
১৯৯৫- বিশেষজ্ঞ বহির্বিভাগ চালু। অন্তর্বিভাগের শয্যাসংখ্যা বেড়ে হল ১৫। হাসপাতালের নিজস্ব ল্যাবরেটরি ও নতুন এক্স-রে মেশিনের উদ্বোধন। অপারেশন থিয়েটারের কিছু আধুনিকীকরণ।
১৯৯৬- হাসপাতালের পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে গানমেলা। রাজ্যের তৎকালীন গুণী শিল্পীদের বিনা পারিশ্রমিকে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতায় গানমেলা এক অন্য মাত্রা ধারণ করে।
ঐ বছরেই জুলাই মাসে আপামর শ্রমিক-কর্মচারীদের অনিশ্চিত অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়ে, তাদের বিশাল বকেয়া পাওনা বাকি রেখে ইন্দো-জাপান স্টিলস্ লিঃ কারখানা বন্ধ হয়ে যায় - চিরদিনের জন্য।
হাসপাতালের প্রাণস্বরূপ ইন্দো-জাপান স্টালস্-এর শ্রমিকরা রাতারাতি নিঃস্ব, রিক্ত । তবু হতোদ্যম না হয়ে হাসপাতালের কর্মকান্ড এবং ১৯৭৯ সালে গঠিত মডার্ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল কো-অপারেটিভের সোসাইটির মাধ্যমে আকুপাংচার সুঁচ উৎপাদন ও বন্টন ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িয়ে সবার সংগ্রামে যুক্ত থাকার চেষ্টা শুরু হয়। সে প্রচেষ্টা, সে সংগ্রাম আজো অব্যাহত।
১৯৯৭- ২৬ এপ্রিল - 'কালো রাত কাটে না, কাটে না...'
প্রোমোটারের স্বার্থরক্ষার্থে সশস্ত্র পুলিশ, গুন্ডা তথা লুঠেরা বাহিনী, ভাড়াটে বহিরাগতদের অশুভ শক্তি হঠাৎই সেদিন আদিম হিংস্রতায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল শ্রমজীবী হাসপাতালের উপর। চিকিৎসাধীন রোগী, পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে হাসপাতাল কর্মী, উপস্থিত সাধারণ মানুষ কেউই বাদ যায়নি ওই বীরপুঙ্গবদের অকারণ অমানবিক অত্যাচারের হাত থেকে। অকথ্য গালিগালাজ, ভাঙচুর, লুঠতরাজের শিকার হতে হল তিলে তিলে এতদিনের গড়ে ওঠা একটি আদ্যন্ত সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে। সভ্যজগতে যার উদাহরণ বিরল।
২৮ এপ্রিল- সর্বস্তরের সমাজমনস্ক সমব্যথী মানুষ একস্বরে গর্জে উঠে সুবিচারের দাবীতে শ্রমজীবীর পাশে এসে দাঁড়ালেন। যাঁদের মধ্যে এপিডিআর, নাগরিক মঞ্চের অবদান ভোলার নয়। বহু কবি, সাহিত্যিক কলম ধরলেন শ্রমজীবী হাসপাতালের পক্ষে। দোষীদের শাস্তি, হাসপাতালের ক্ষতিপূরণের দাবীতে কলকাতা হাইকোর্টে মাননীয় বিচারপতি এস বি সিনহার আদালতে এক জনস্বার্থ মামলা দায়ের হল। মাননীয় বিচারপতি নিজে সরাসরি তদন্ত করার জন্য প্রবীণ আইনজীবী হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়কে কোর্ট ইনস্পেকটর নিয়োগ করলেন। ১৬ জুলাই ১৯৯৭ হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতি এস বি সিনহা তাঁর রায়ে শ্রমজীবী হাসপাতালের উপর পূর্ণ সহমর্মিতা প্রকাশ করেন, ঘটনার নিন্দা করেন, মানবাধিকার কমিশনকে নিরপেক্ষ তদন্ত এবং অন্তবর্তীকালীন ক্ষতিপূরণ কী হওয়া উচিত তা নির্ধারণ করার নির্দেশ দেন। শ্রমজীবী শুরু করে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই, সৃষ্টিশীল কাজের মধ্য দিয়ে। আরো বেশি করে শপথবদ্ধ হয়ে । সম্মিলিতভাবে ।
১৪ই ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে হাসপাতাল ভাঙচুরের প্রেক্ষিতে মানবাধিকার কমিশন এক ঐতিহাসিক সুপারিশ করে। যাতে শ্রমজীবী হাসপাতালকে ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ সহ দোষী পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়।
১৯৯৮- বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির অগ্রগতির সুফল সমাজের সাধারণ মানুষের কাছে সহজে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে শুরু হয় ল্যাপরোস্কোপিক সার্জারি। উল্লেখ্য, এই প্রযুক্তি শ্রমজীবী মানুষের আরো কম সময়ে কর্মক্ষম হয়ে ওঠার পক্ষে সহায়ক।
প্রসঙ্গত সেই সময়ে ল্যাপারোস্কপি সার্জারির অন্যত্র যা খরচ ছিল তা শ্রমজীবী মানুষের সাধ্যাতীত। শ্রমজীবী হাসপাতাল ল্যাপারোস্কপি সার্জারিকে শ্রমজীবী মানুষের আয়ত্বের মধ্যে নিয়ে আসে।
১২ই মার্চ-মরণোত্তর চক্ষুদান আন্দোলনে সামিল হল শ্রমজীবী হাসপাতাল। ঐ দিন শ্রমজীবী হাসপাতালের প্রথম মরণোত্তর চক্ষুদান করেন শ্রীরামপুর নিবাসী শ্রীমতী বাসন্তী সরকার । চক্ষুদানে সহায়তা করেন শ্রীরামপুর সেবা কেন্দ্র ও চক্ষু ব্যাংকের বন্ধুরা।
১৯৯৯- জুন-জুলাই মাসে শ্রমজীবী হাসপাতালের মুখপত্র শ্রমজীবী স্বাস্থ্য প্রকাশ শুরু হয়। সম্পাদনা করেন ডাঃ অনিল সাহা।
সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাক্ষিক স্বাস্থ্য শিবির শুরু। সরবেড়িয়া গ্রা্ে 'কৃষিচক্র” গণসংগঠনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে শুরু হয় পাক্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির প্রসঙ্গত, 'কৃষিচক্র' এ অঞ্চলে ১৯৮৯ সাল থেকে নানা সামাজিক কাজকর্ম শুরু করে.যেমন - কুসংস্কার বিরোধী অনুষ্ঠান, সাপ বিষয়ে চেতনা বিস্তার, জৈব সার বিষয়ে সচেতনতা বুদ্ধি এবং ১৮টি পরিবারের চাষ জমি একত্রিত করে যৌথ চাষাবাদ, গরু-মুরগি পোষা, যৌথ রান্নাঘর চালানো ও গোবর গ্যাসের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহারও উল্লেখ্য। ১৯৯৩ সাল থেকেই সরবেড়িয়া কৃষিচক্র শুরু করে মশলার উৎপাদন। মাঝে কিছু দিন অনিয়মিত, বর্তমানে এ মশলা শ্রীরামপুর, বেলুড়, চেঙ্গাইল, কলকাতা, খড়দা, চুচুড়া, কীচরাপাড়া, মদনপুর, রাজডাঙী, যাদবপুর প্রভৃতি এলাকায় নিয়মিত পাওয়া যায়। যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত স্বাস্থ্য শিবিরের নাম রাখা হয়“সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতাল”। পরবর্তীকালে নিবন্ধীকৃত হয় “সুন্দরবন শ্রমজীবী স্বাস্থ্য প্রকল্প” নামে।
নিয়মিত আকুপাংচার চিকিৎসা শুরু বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালে।
২৯ আগস্ট শ্রমজীবী হাসপাতাল বিষয়ক সংকলন 'প্রসঙ্গ : বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতাল' প্রকাশ । সম্পাদনা করেন অরুণজিৎ সিংহ।
২০০০- “আমার ভাণ্ডার আছে ভরে/ তোমা সবাকার ঘরে ঘরে” - অর্থ সংগ্রহ অভিযানে নতুন মোড় 'শ্রমজীবী ভাণ্ডার'। শ্রমজীবী পরিবারের শিশু সহ সমস্ত সদস্যদের মধ্যে শ্রমজীবী ভাবনা ছড়িয়ে দিতে প্রতিদিন অস্তত এক টাকা থেকে ১৩ টাকা ভাণ্ডারে দান করার অভিনব ভাবনার শুরু। বৎসরান্তে সাধারণ সভায়, সেই সঞ্চিত অর্থ আজও একত্র জমা হয়ে থাকে।
অন্বেষা পাঠাগার : ছোট্ট অন্বেষা সেন এর অকাল মৃত্যুর পরে, তারই স্মৃতিতে 'অন্বেষা পাঠাগার' নামক এক ছোট কিন্তু সমৃদ্ধ পাঠাগার গড়ে ওঠে সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতালে
'প্রসঙ্গ: বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতাল'-এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ বইমেলায়। সম্পাদনা করেন অরুণজিৎ সিংহ।
২০০১- হাসপাতালের পক্ষ থেকে বিশিষ্ট সহযোগীদের শুশ্রূত সম্মান প্রদান।
অর্থোপেডিক অস্ত্রোপচার-এ সহায়তার জন্য ইমেজ ইনটেনসিফায়ার মেশিন কেনা হল এবং ল্যাপারো-কোলেডো ফাইব্রোস্কোপি সেট আনা হল এস.বি.আই. সমৃদ্ধি ভবনের সহযোগিতায় যা ল্যাপ অপারেশন সহজতর করে তুলল।
বেলুড় বিবেকানন্দ সেবা সমিতির সহযোগিতায় শ্রমজীবী হাসপাতালের সামনে পানীয় জলের ট্যাঙ্ক নির্মাণ ।
২০০২- বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালে RNTCP (Revised National TB Control Programme)-এর উদ্বোধন।
২৯ ডিসেম্বর, অন্তর্বিভাগ এর সুবিধা সহ সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতাল-এর প্রতিষ্ঠা। ২৯ শে ডিসেম্বর ৪টি শয্যা নিয়ে শুরু পথ চলা । সুকঠিন কিন্তু সুপ্রত্যয়ী সেই চলার শুরু। ঐ বছরেই শ্রীমতী রেবা সেন তাঁর দুই বিঘা জমি দান করেন সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতালের জন্য । দুঃখের কথা রেবা সেনের প্রয়াণ হয় হাসপাতাল উদ্বোধনের আগেই।
লোকগাথা: সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতালের মুখপত্র 'লোকগাথা'-র প্রথম প্রকাশ। সম্পাদনা করেন শেখর দাস।
Early Cancer Detection Centre শুরু বেলুড়-এ ।
২০০৩- ২৯ শে নভেম্বর প্রথম হৃদযন্ত্রের সফল অপারেশন। রোগী সিরাজুল মন্ডল - রাজমিস্ত্রীদের সহকারী মজুর। এই অপারেশন শ্রমজীবী হাসপাতালকে উদ্বুদ্ধ করে আগামী প্রকল্প'হৃদয় ছুঁয়ে' সংগঠিত করতে।
২৯ নভেম্বর 'প্রসঙ্গ বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতাল'-এর তৃতীয় সংকলন প্রকাশ। সম্পাদনা করেন অরুণজিৎ সিংহ।
২০০৪- প্রকৃত খরচে বাইপাস সার্জারী করার জন্য ১ কোটি টাকা অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে'হৃদয় ছুঁয়ে' প্রকল্পের সূচনা। 'হৃদয় যাত্রা' সেই সময় এক বিশেষ মাত্রা দেয় 'হৃদয় ছুঁয়ে' প্রকল্পকে। ডিসেম্বর মাসের ২৯ তারিখ বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতাল থেকে একটি ট্যাবলো নিয়ে প্রায় বাইশ জনের দল যাত্রা শুরু করে। ট্যাবলো প্রথমে যায় সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতালে । সেখানে শ পাঁচেক মানুষের সাইকেল মিছিল কানমারি থেকে সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতালে ট্যাবলোর আগে আগে এসে অভ্যর্থনা জানান। পরে ট্যাবলো মালঞ্চ, সাই্ন্সসিটি, দমদম, সোদপুর, বড়জাগুলি, নৈহাটি, কল্যাণী, রাণাঘাট, শাস্তিপুর, কৃষ্ণনগর, মালদা, ইটাহার, জলপাইগুড়ি। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার প্রভৃতি যায়গায় পথসভা, পথনাটক, গান করতে করতে শিলিগুড়ি পৌঁছোয়। ফেরার পথে বহরমপুর, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, চন্দননগর, শেওড়াফুলি, হাওড়া, উলুবেড়িয়া, ফুলেশ্বর প্রভৃতি জায়গায় পথসভা, নাটক ও গান করতে করতে শ্রমজীবী হাসপাতালে ফিরে আসে । ১৫ দিনের এই প্রচার অভিযানের মাধ্যমে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা সংগৃহীত হয়।
২০০৫- ২৭ মার্চ রাজ্যের বহু মানুষের উপস্থিতিতে এক প্রাণময় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে 'হৃদয় ছুঁয়ে' প্রকল্পের সফল রূপায়ণ হয়। এ দিন “অরবিন্দ চৌধুরী কার্ডিয়াক ভবন" এবং 'তারকেশ্বর চক্রবর্তী কার্ডিয়াক সার্জারী ইউনিট'-এর উদ্বোধন হয়। হার্ট বাইপাস সার্জারী পঁচিশ হাজার টাকায় সম্ভব হওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপিত হল।
২৮ মার্চ “অরবিন্দ চৌধুরী মেমোরিয়াল গ্রেট ইন্ডিয়ান ড্রিম এ্যাওয়ার্ড-২০০৫" সম্মান লাভ করে শ্রমজীবী হাসপাতাল। যার অর্থমূল্য ছিল পনেরো লক্ষ টাকা।
উঃ ২৪ পরগণার আগরপাড়ায় এবং হুগলীর শেওড়াফুলিতে 'শ্রমজীবী স্বাস্থ্য প্রকল্প' কেন্দ্র স্থাপন। যদিও বর্তমানে দুটি কেন্দ্রই নিষ্ক্রিয়।
বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালের দেওয়াল পত্রিকা "শ্রমজীবী জানালা" প্রকাশিত হয়।
২০০৬- ১৫ জানুয়ারি “চোখের আলোয়'- শীর্ষক চক্ষু বিভাগ ও ছানি অপারেশন (মাইক্রো সার্জারী) ইউনিটের উদ্বোধন এবং বহু মানুষের চক্ষুদানের অঙ্গীকার
শ্রমজীবী হাসপাতালের দীর্ঘদিনের সাথী এক্স-রে বিভাগের পরিচালক শ্রী শম্ভুনাথ (বাচ্চুদা) ব্যানাজী-এর অকাল মৃত্যু। শ্রমজীবী হাসপাতালের অপূরণীয় ক্ষতি।
Dialysis,Endoscopy,Colonoscopy, ERCP,USG বিভাগের উদ্বোধন।
প্রয়াত ব্রতদেব মণ্ডলের স্মরণে উখড়ায় কয়লাখনি অঞ্চলে স্বাস্থ্যশিবির।
১ জুলাই, বর্ধমানের উখড়ায় হাইড্রোসিল অপারেশন ক্যাম্প। ৭৬ জন রোগীর অপারেশন একদিনে করা হয়। উখড়া শ্রমজীবী স্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্বোধন। যদিও বর্তমানে কেন্দ্রটি নিষ্ক্রিয়।
বেলুড়ে শ্রমজীবী ওষুধের দোকান-এর উদ্বোধন।
ডাঃ দীপঙ্কর সেনগুপ্ত ও শ্রীমতী সুপ্রিয়া সেনগুপ্ত দ্বারা তাদের অকাল প্রয়াতা কন্যা দিশা সেনগুপ্ত-র স্মরণে তার সংগৃহীত সমস্ত বইপত্র, পত্রিকা দান-এর মাধ্যমে শ্রমজীবী পাঠাগারএর সুচনা।
শ্রমজীবী শিশু সহায়তা উদ্যোগ, ১৫ বছরের নিচে আর্থিক সংগতিহীন শিশুদের ক্যানসার চিকিৎসার সহায়তার লক্ষ্যে 'শ্রমজীবী শিশু সহায়তা উদ্যোগ' নামে একটি তহবিল গঠন। বর্তমানে তহবিল সংগ্রহের কাজ থমকে থাকলেও কিছু অর্থ এ তহবিলে আছে।
২০০৭- শুরু আলট্রাসোনোগ্রাফি, ইকোকার্ডিওগ্রাফি, ডপলার পরীক্ষা।
রজতজয়ন্তী বর্ষ উদ্যাপনের প্রস্তুতি শুরু। বর্ষ ব্যাপি মাসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ে আলোচনা।
২০০৮- পঁচিশ বছর পূর্তি উৎসব। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০০৮ থেকে ৬ দিন ব্যাপী 'প্রত্যয়ী পঁচিশ'এর অনুষ্ঠান শুরু। বিভিন্ন জেলার হস্তশিল্পীদের নিয়ে মেলা, বিভিন্ন বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান,'শিকড়ের সন্ধানে' শীর্ষক লোকগানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, এছাড়াও নানান সংগঠন ও অগণিত মানুষের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, সেমিনার, স্বাস্থ্য সচেতনতা কর্মসূচী, কুসংস্কার বিরোধী অনুষ্ঠান-এর সার্থক রূপায়ণ। ২ অক্টোবর শ্রমজীবী হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা দিবসে ২৫টি ট্যাবলো সহ হাওড়া-কলকাতা পরিক্রমা করে এক বর্ণাঢ্য সাইকেল শোভাযাত্রা
শ্রমজীবী ক্যালেন্ডার, শ্রমজীবীর ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক অভিনব সাল বিহীন ক্যালেন্ডার 'ফিরে দেখা প্রত্যয়ী-পঁচিশ' প্রকাশ।
প্রত্যয়ী পঁচিশ বছরের ইতিহাস নিয়ে গ্রন্থ 'স্মৃতির সরণী বেয়ে' প্রকাশ।
'শ্রমজীবী মন' (শ্রমজীবী কলা পরিষদের সাহিত্যপত্র) প্রথম সংখ্যা প্রকাশ । সম্পাদনা করেন বনানী ভট্টাচার্য্য ও গৌতম সরকার।
২০০৯- গ্রামীণ ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের স্বপ্ন নিয়ে “চাই স্বাস্থ্য চাই প্রাণ" প্রকল্পের ভাবনা।
NPCB চালু(ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ফর কন্ট্রোল অফ ব্লাইন্ডনেস)। সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতালের অন্তর্বিভাগের শয্যা সংখ্যা বেড়ে ২৪ হল।
২৫ মে, সকালেই ঘন অন্ধকার সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। প্রাকৃতিক ধ্বংসলীলায় বিধ্বস্ত হয়ে যায় নদীর এপার ওপার। ঝড় তুফান বন্যা মহামারী নেমে আসে অসহায় মানুষগুলোর উপর আয়লার হাত ধরে। গৃহহীন, অন্নহীন সম্বলহীন মানুষের কান্নাঝরা সেই সময়ে পাশে থাকে সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতাল। করা হয় একাধিক স্বাস্থ্য শিবির। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই চালান প্রতিকূল পরিস্থিতির বিরুদ্ধে। ঔষধ, পথ্য দেওয়ার সাথে সাথেই যৌথ রান্নাঘর গড়ে সবার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। এই উদ্যোগে বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতাল সহ বহু গণসংগঠনও সামিল হয়। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
২০১০- মে দিবসের দ্বিপ্রহরে সমাজের সর্বস্তরের অগণিত মানুষের প্রাণবন্ত উৎসাহ উদ্দীপনায় 'চাই স্বাস্থ্য, চাই প্রাণ' প্রকল্পের উদ্বোধন হল হুগলী জেলার শ্রীরামপুর থানার পিয়ারাপুর পঞ্চায়েতের বড়বেলু গ্রামে। উপস্থিত প্রত্যেকে একটি করে ইঁট সাজিয়ে সুচনা করেন৷ উল্লেখনীয় যে, ১১ মে, ২০১০ থেকেই সেখানে সীমিত পরিসরে বহির্বিভাগ শুরু হয়ে যায়।
১৫ই এপ্রিল চিকিৎসা ক্ষেত্রে শ্রমজীবী হাসপাতালের বিশেষ অবদানের জন্য দিল্লীর আই আই পি এম “মানবতা বিকাশ এ্যাওয়ার্ড" সম্মান প্রদান করে । সম্মানমূল্য ছিল পাঁচ লক্ষ টাকা।
RSBY (রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা)-এর অন্তর্ভুক্তি।
২০১১ - শ্রীরামপুর হাসপাতাল ভবন তৈরীর কাজ শুরু হয় ১৭ এপ্রিল যেদিন উপস্থিত সকলে শ্রমদান উৎসব করে মাটি খুঁড়ে কাজে হাত লাগান, যে কর্মসূচীতে যোগ দিয়েছিলেন অন্যান্য বহু সাধারণ মানুষ। ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারীর মধ্যে প্রথম দফার কাজ শেষ করার লক্ষ্য স্থির করা হয়।
১৯ শে জানুয়ারী, ২০১১ - আইন মানো আন্দোলন ইন্দোজাপানের শ্রমিকরা, শ্রমজীবী হাসপাতালের কর্মীরা এবং নাগরিকবৃন্দ অভিনব'আইন মানো' আন্দোলন করে বালি জগাছা ব্লক-এর বি এল আর ও অফিস ঘেরাও করে। দাবি ছিল--৬/৩ এর আওতায় থাকা বন্ধ কারখানা ইন্দোজাপানের জমিতে প্রোমোটারি করতে না দিয়ে আইন মোতাবেক জমিটিকে খাস জমি হিসাবে অধিগ্রহণ করা ।
৩১ আগস্ট আই.আই.পি. এম -এর পক্ষ থেকে 'অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সেলেন্স ইন হেলথ কেয়ার' সম্মান প্রদান করা হয় শ্রমজীবী হাসপাতালের অন্যতম সংগঠক ফণিগোপাল ভট্টাচার্যকে। সম্মানমূল্য ছিল একলক্ষটাকা। শ্রী ভট্টাচার্য সম্মানমূল্যের পুরোটাই শ্রমজীবী হাসপাতালে অনুদান হিসাবে দেন।
২০১২- ২৬ জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের সবকটি জেলার একটি করে সুসজ্জিত ট্যাবলো ও অসংখা সাইকেল, বাইক ও গাড়ির এক সুবিশাল মিছিল বেলুড় শ্রমজীবী থেকে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের জমিতে যায়। অভূতপূর্ব উদ্দীপনার মধ্যে সারা রাজ্য থেকে সমাগত সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতিতে প্রত্যেকের সক্রিয় অংশ গ্রহণে উদ্বোধন হয় শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের। এদিন আগত প্রত্যেকেই ছিলেন উদ্বোধক। একটি বিশাল বোর্ডে শ্রমজীবী হাসপাতাল, চাই স্বাস্থ্য চাই প্রাণ লেখাটি প্রত্যেকে একটি একটি ফুল গেঁথে ফুটিয়ে তোলেন। সঙ্গে ধামসা মাদল নৃত্য সঙ্গীতের তালে তালে মেতে ওঠেন সকলে। কোনো সরকারী বদান্যতা, বিদেশী অর্থ সাহায্য ছাড়াই মানুষের শ্রম অর্থ চিন্তা ভালবাসায় গড়ে ওঠা এই বিপুল কর্মকান্ড বাস্তবে যৌথতার এক ঐতিহাসিক নিদর্শন হয়ে রইল।'চলো যাই রুগীর বাড়ি'- এক আশ্চর্য পদক্ষেপ। গ্রামে গ্রামে ডাক্তার/ স্বাস্থ্যকর্মী নার্সের অভাব। পীড়িত রোগীর ইসিজি করা, সেলাই কাটা, ক্যাথিটার পরানো, অক্সিজেন/ নেবুলাইজার ব্যবহার, ব্লাড প্রেসার দেখা, সর্বোপরি ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ নির্ণয় ও উপশম চিকিৎসার মতো কাজগুলি ঠিকঠাক সম্পন্ন করে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রেখে চলতে পারলে সমস্যার অনেকটাই সুরাহা হয়। সেই লক্ষ্যে স্থানীয় অল্পশিক্ষিত তরুণ তরুণীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে, সমাজ ভাবনায় অনুপ্রাণিত করে কাজে লাগানোর এই প্রয়াস নিঃসন্দেহে এক দূরদর্শী পদক্ষেপ । যদিও সমমনস্ক সংগঠনের যথাযথ উদ্যমের অভাবে ঐ প্রকল্প যথেষ্ট সাফল্য লাভ করেনি।কলকাতা নিবাসী বিশিষ্ট শিক্ষক আর এন গুপ্ত শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের রেডিওলজি ইউনিটের জন্য পঁচানব্বই লক্ষ টাকা দান করেন। কেনা হয় এক্স-রে,সিটি স্ক্যান, ইউ এস জি, ইমেজ ইনন্টেসিফেয়ার প্রভৃতি মেশিন। যদিও কিছু আইনী জটিলতায় সিটি স্ক্যান মেশিনটি চালু করা যায়নি।
৩ জুলাই ২০১২ - শর্মিলা ঘোষ সাহিত্য পুরস্কার । “জীবনটা নয় ব্যক্তিগত” এই ভাবনায় যাঁর জীবনতরী বাঁধা ছিল, গণবিজ্ঞান-মানবাধিকার আন্দোলনে যিনি হেঁটেছেন বহুপথ, সক্রিয় থেকেছেন সংস্কৃতির অঙ্গনে, লিখেছেন অজস্র গল্প কবিতা, শ্রমজীবী হাসপাতালের যাবতীয় কর্মকান্ডে থেকেছেন অগ্রণী ভূমিকায়, নিজের অজান্তেই হয়ে উঠেছিলেন বহু জনের আশ্রয় - বড়া মধুসূদন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের অন্যতম প্রিয় শিক্ষিকা সেই শর্মিলা ঘোষ আর আমাদের মধ্যে নেই। একটি দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে তাকে৩ জুলাই ২০১২-র দুপুরে । শর্মিলা ঘোষ-এর সমস্ত জীবনের কর্মকাণ্ডকে সম্মান জানাতেই প্রতি বৎসরে প্রকাশিত শ্রেষ্ঠ ছোটগল্পের জন্য পরবর্তী বৎসরের জুলাই মাসের প্রথম রবিবার'শর্মিলা ঘোষ সাহিত্য পুরস্কার' দেওয়া শুরু হল “শ্রমজীবী মন" পত্রিকার পক্ষ থেকে। প্রথম বছর পুরস্কার পান মিঠু মাইতি পরবর্তী বছরগুলিতে যথাক্রমে আফিফ ফুয়াদ, তন্বী হালদার ও বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রচেত গুপ্ত, শ্রেয়া ঘোষ, শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় এ পুরস্কার পান।
১লা মার্চ ২০১৩ - এ চালু হল শ্রমজীবী বিদ্যালয়। উদ্দেশ্য মানুষ গড়া, নতুন মানুষ যারা ঘাড়ে নিয়ে জোয়াল এগিয়ে নিয়ে যাবে সহস্র শ্রমজীবী উদ্যোগ আর সমাজমুখী কর্মধারাকে। সাথে সাথে নতুন চর্চার শিক্ষা যেখানে “দিবে আর নিবে মিলাবে মিলিবে” এই বাণীকে আত্মস্থ করে শিক্ষার সরকারী বেড়া মাধ্যমিক টপকাবে । আসলে মাধ্যমিক বেড়াকে অস্বীকার করাই যেত যেমন স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আমাদের কর্মীবাহিনী অনায়াসে সরকারী বেড়া না ডিডিয়ে নিরলস প্রচেষ্টায় ন্যাধ্যমূল্যে পরিষেবার নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে শিক্ষার ক্ষেত্রে কি সেই পথ নেওয়া যায়? কেনই বা নেওয়া হবে? এর খোঁজই আমাদের তিন বছরের অনুশীলনের উপলব্ধি। আমাদের ঘোষিত শ্লোগান ছিল তিন বছরে মাধ্যমিক পাস করা সম্ভব যদি ন্যুনতম ১৩ বছরের পড়ুয়া পাওয়া যায় যারা বাঙলা পড়তে পারে এবং যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ জানে । খুব অসহায় মনে হয় যখন দেখি ৮৫ শতাংশ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয় অথচ ক্লাস এইটে পড়া গ্রামবাঙলার প্রায় ৯০ শতাংশ শ্রমজীবী ঘরের পড়ুয়া বাঙলা পড়তে পারে না। অর্থাৎ এই পাশের পড়ার সাথে প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা আলোচনার মাধ্যমে পড়ুয়ার বোধের দুয়ার উন্মোচিত করতে চেয়েছিলাম। এরা পরীক্ষায় বসেছিল শুধু আলোচিত ওয়ার্কসিট বা কর্মপত্র নিয়ে চালু বাজারী বই বাতিল করে। আমাদের অভিজ্ঞ শিক্ষাব্রতীরা জানেন অঙ্কে ৯০ শতাংশ নম্বর মানে জাবর কেটে বমি করা, অংকের বোধে জ্ঞান অর্জন নয়। তাই মাধ্যমিক কোন শিক্ষার মানদন্ড নয়। তাই এ পথ ছেড়ে নতুন পথ খোঁজ শুরু হবে একদিন, সেদিন শুধু বোধের ঝুলি নিয়ে আমাদের পড়ুয়ারা নম্বরের ঝুড়ি ভরাতে পারবে । আসলে এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ । প্রথম দফায় অর্জন করা গেল বিশ্বাস -- প্রায় বাঙলা পড়তে না পারা বেশীরভাগ পড়ুয়া মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হল। পরীক্ষা দিয়েছিল ২০ জন পড়ুয়া। ১৭ জন সফল হয়েছে। শতাংশের হিসাবে সারাদেশে পাশের যে গড় তার সমান। কিন্তু বোধ সমাজভাবনায় তারা সাধারণের চেয়ে অনেক এগিয়ে।
২৭ শে মার্চ, ২০১৩- এক মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনা নির্দয়ভাবে কেড়ে নিল শ্রমজীবীর দুজন মানবদরদী জনপ্রিয় চিকিৎসক ভাঃ মালবিকা বিশ্বাস ও ডাঃ কল্যাণ কুমার বিশ্বাসকে । এবছরেই আমরা হারিয়েছি আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধু দক্ষ হৃদ্ চিকিৎসক ডাঃ ভুবনেশ্বর হালদারকেও। অগণিত মানুষের পক্ষে এই বিচ্ছেদ ছিল দুঃসহ।
২৬ শে জানুয়ারী ২০১৪- এবারের প্রতিষ্ঠা দিবস উদ্যাপন- বাস্তবিক এক স্মরণীয় ঘটনা । 'আবার হৃদয় ছুঁয়ে' র হাত ধরে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে ক্যাথল্যাব প্রতিষ্ঠিত হল। সম্ভবত পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত এলাকায় একমাত্র ক্যাথল্যাব। যে মেশিনের সাহায্যে হার্টের এ্যাঞ্জিওগ্রাফি, এ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি, বেলুন সার্জারী প্রভৃতি করা সম্ভব হবে।সেই সঙ্গে উদ্বোধন হল ডাঃ জন্মেজয় চৌধুরী ক্যান্সার সেন্টার।শ্রমজীবী বিদ্যালয়-এর ছাত্রদের উদ্যোগে ত্রৈমাসিক বুলেটিন 'অনুশীলন' প্রকাশের শুরু। চারুকলা কেন্দ্র নিয়মিত করার চেষ্টা চলছে। খেলার সাথী কর্তৃক ফুটবল টুনামেন্টের আয়োজন করা হয় শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে ।'অথ শ্রমজীবী বিদ্যালয় কথা' হাতে লেখা বার্ষিক সংকলন প্রকাশ।রাস্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনার সারমর্ম বোঝার উদ্দেশ্যে শ্রমজীবী হাসপাতাল শ্রীরামপুর সংলগ্ন ৬৬ জন মানুষকে 'শ্রমজীবী স্বাস্থ্য সুরক্ষা কার্ড' প্রদান করে। প্রতি ব্যক্তি পিছু শ্রমজীবীর বন্ধুরা ৭০০ টাকা শ্রমজীবীর তহবিলে দান করেন। প্রায় ১ মাস ধরে স্থানীয় অঞ্চলে সার্ভে করে আর্থিক অনগ্রসর শ্রেণীর মানুষের হাতে এ কার্ড ২৬ জানুয়ারি ২০১৩ তুলে দেওয়া হয়। কার্ডের মেয়াদ ছিল ১ বছর। ১ বছর পরে দেখা যায় কার্ডের বিনিময়ে নিখরচায় চিকিৎসা নিতে এসেছেন মাত্র ১ জন রোগী । ফলত রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনার অসারতা প্রকট হয়ে পড়ে।
২৭ এপ্রিল, রাণাঘাট শহর থেকে দেড় কিমি দূরে চুর্ণী নদীর পাড়ে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে স্থানীয় মানুষজন বিশেষত অন্তর্দীপন সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের সহযোগিতায় উদ্বোধন হয় রাণাঘাট শ্রমজীবী হাসপাতাল - যদিও নানা স্থানীয় কারণে উদ্যোগটি আপাতত স্থগিত আছে।
৬ই জুলাই, সুদক্ষিণা স্মৃতি পুরস্কার - ছোট্ট সুদক্ষিণা পড়াশোনার অবকাশে কবিতা লিখত, ছবি আঁকত। ভাল করে বিকশিত হওয়ার আগেই অকালে ঝরে গেল ফুলের কুঁড়িটি। শ্রমজীবী হাসপাতালের পক্ষ থেকে তার স্মৃতিতে অনন্য মানবিক কাজের জন্য প্রতি বৎসর 'সুদক্ষিণা স্মৃতি পুরস্কার' ঘোষণা করা হয়েছে। পুরস্কারের অর্থ মূল্য ২৫,০০০ টাকা। প্রথম বছর সম্মানিত হলেন মোসলেম মুন্সি। পরবর্তী বছরগুলির পুরস্কার প্রাপকরা হলেন মণিকা সরকার, গীতা রাউত, হিন্দোল আহমেদ।এইসব উৎসাহজনক সামাজিক কাজকর্ম দেখে সাহায্যের হাত বাড়াল ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক অফ কমার্স, সল্টলেক এবং স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার রিজিওন্যাল অফিস-৫ একটি করে আধুনিক মাহিন্দ্রা কোম্পানী নির্মিত বোলেরো অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সহযোগিতা করেন।এ বছরের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা বালী বেলুড় লিলুয়া অঞ্চলের অসংখ্য সাধারণ মানুষের উদ্যোগে “শ্রমজীবী সহযোগী মঞ্চ” গড়ে ওঠা - যার লক্ষ্য এলাকার তথা মানুষের স্বার্থে, বন্ধ ইন্দো-জাপান কারখানার জমির আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালের সর্বাত্মক প্রসারণকে বাস্তবায়িত করা, হাসপাতালকে সুরক্ষিত রাখা।১ মে 'শ্রমজীবী কথা' প্রথম প্রকাশ। সম্পাদনা করেন দেবাশিষ ভট্টাচার্য ।
৬ই অক্টোবর, ২০১৪ শ্রীরামপুর হাসপাতালের ছাদে স্বাস্থ্যকর্মী ও শ্রমজীবী বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের উপস্থিতিতে 'অলৌকিক নয় লৌকিক' এই শীর্ষক একটি অনুষ্ঠান এর আয়োজন করা হয়। আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত যে সব ঘটনা ঘটে চলে তার প্রত্যেকটি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে। এই বিজ্ঞান মনস্কতা আমাদের সচেতন মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে পারে। এই উদ্দেশ্যে আমাদের ভারতীয় যুক্তিবাদী সমিতির বাগনান শাখার বন্ধুরা এসেছিলেন, আমাদের সামনে এরকম কিছু বিষয় বা ঘটনাকে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সহ বুঝিয়ে দিতে যে সমস্ত ঘটনা কোনো অলৌকিক ক্ষমতার কারণে ঘটে না, ঘটে প্রাকৃতিক নিয়মে বা বৈজ্ঞানিক নিয়মে।
২১শে ডিসেম্বর ২০১৪ - শিবপুর বি.ই কলেজ এর প্রাক্তন ছাত্ররা যারা পৃথিবীর নানা দেশে নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছেন পেশাগত কারণে; ২১ শে ডিসেম্বর এক অভিনব পন্থায় মিলিত হলেন ধর্মতলা থেকে শিবপুর বি.ই কলেজ বাসরুট নম্বর ৫৫। এই ৫৫ নম্বর রুট ধরেই তাদের বি. ই কলেজের ছাত্র জীবন কেটেছে। তাই এই ৫৫ নং রুট ধরেই তারা ছুটবেন বা হাঁটবেন ধর্মতলা থেকে শিবপুর বি ই. কলেজবপর্যন্ত। এ বছরটা ছিল তাদের ২য় বছর। এই অভিনব দৌড় / হাঁটায় অংশ নিতে এবং নাম নথিভুক্ত করানোর জন্য তারা ধার্য করেছিলেন ৫৫ ডলার (ভারতীয় মূল্যে ৩৪১০ টাকা ) এই বাবদ প্রাপ্ত অর্থ তারা তুলে দিলেন শ্রমজীবী হাসপাতালকে। শ্রমজীবী হাসপাতালের পক্ষে শ্রমজীবী পরিবারের, শ্রমজীবী বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও আগাগোড়া সক্রিয় ভাবে অংশ নিয়েছেন এই দৌড় বা রুট ৫৫ যাত্রায়।
২৬ শে জানুয়ারী ২০১৫- শ্রমজীবী হাসপাতালের জন্য হাঁটুন। শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের তৃতীয় বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে শেওড়াফুলি স্টেশন থেকে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতাল প্রাঙ্গণ পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এই পদযাত্রায় পা মেলান। এছাড়াও সারাদিন ব্যাপী শ্রমজীবী বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী কর্তৃক নাটক, শ্রমজীবী পরিবারের সদস্য/সদস্যাদের গান, নাচ এবং নানান অনুষ্ঠান ও কবাডি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। বিগত বছরগুলির ধারাবাহিকতাতেই এবার যুক্ত হয়েছে এক অন্যতর অঙ্গীকার - যে অঙ্গীকার অসংখ্য সাধারণ মানুষের চোখে দৃষ্টি ফেরাতে সাহায্য করবে। এদিন যাঁরা পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন তারা প্রত্যেকে চোখের ইউনিটটি গড়ে তোলার জন্য কমপক্ষে ৫০০ টাকা অনুদান দেন।
৮ ফেব্রুয়ারী, পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। দাবি ছিল হাসপাতাল সংলগ্ন ১৪ বিঘা পড়ে থাকা অব্যবহৃত খাস জমিতে হাসপাতাল সম্প্রসারণ। বে-আইনী পদ্ধতিতে এ জমি দখলের মরিয়া প্রচেষ্টা চালিয়েছে প্রমোটার চক্র বিভিন্ন সময়ে । কিন্তু ইন্দোজাপান কারখানার শ্রমিক ও শ্রমজীবী হাসপাতালের সদস্য সমর্থকদের নজরদারির জন্য প্রমোটাররা জমিকে কব্জা করতে পারেনি। প্রমোটাররা কিছু সরকারী কর্মচারীর সাহায্যে বে-আইনী ভাবে এ খাস জমির চরিত্র বদলে ফেলেছিল। অথচ যার আবেদনে জমির চরিত্র বদল হল, তার কাছে জমির কোনো বৈধ মালিকানাই ছিল না। এই পরিস্থিতিতে ২০১১ সালের জানুয়ারী মাসে ইন্দোজাপানের শ্রমিকরা, শ্রমজীবী হাসপাতালের কর্মীরা এবং নাগরিকবৃন্দ অভিনব“আইন মানো' আন্দোলন করে বালি জগাছা ব্লক-এর বি এল আর ও অফিস ঘেরাও করে রাখেন। চাপে পড়ে অফিসার বাধ্য হন জমির চরিত্র পরিবর্তন সংক্রান্ত আদেশ বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু করতে। জমি বর্তমানে সরকারী খাস জমির চরিত্র পেয়েছে, এই অবস্থায় এ জমির যথার্থ দাবিদার শ্রমজীবী হাসপাতাল, কারণ এটি প্রকৃত অথেই জনকল্যাণমুখী একটি গণ উদ্যোগ এবং বর্তমান হাসপাতালটিও এ জমির একাংশে আছে ফলে তারাই জমির সহ অংশীদার। এই পরিস্থিতিতে শ্রমজীবী হাসপাতালকে আরও বিকশিত ও সম্প্রসারিত করতে এবং এ সরকারী খাস জমি শ্রমজীবী হাসপাতালের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে গত ১ ডিসেম্বর ২০১৩ তে গড়ে ওঠে 'শ্রমজীবী হাসপাতাল সহযোগী মঞ্চ' । এই মঞ্চের উদ্যোগে গত ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪ একটি “নাগরিক সভা” বেলুড় লালবাবা কলেজে অনুষ্ঠিত হয়। বালী বেলুড় ও তৎসংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার মানুষ ও বহুদূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন মান্যগণ্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে সভাটি সত্যিকারের অর্থে সার্থক হয়ে ওঠে। সভা থেকে সরকারী খাস জমিতে শ্রমজীবী হাসপাতালের সম্প্রসারণের জন্য প্রচার আন্দোলন ও নাগরিক স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানের প্রস্তাব নেওয়া হয়। পাশাপাশি সরকারের কাছেও জমি ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে একাধিকবার আবেদন জানানো হয়। অবশেষে ৩ জুলাই ১৪ তারিখে রাজ্য সরকারের ভূমি দপ্তরের প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারী শ্রী এ. কে. সিং এর নির্দেশ বলে খাস জমির বিষয়ে হিয়ারিং হয় । হিয়ারিং-এ ডাকা হয় এ জমির উপর অবস্থানকারী শ্রমজীবী হাসপাতাল, এবং বর্তমানে অস্তিত্বহীন গ্রান্ডস্মিথি-এর প্রতিনিধিদের । মজার ব্যাপার এ হিয়ারিং-এ অস্তিত্বহীন গ্রান্ডস্মিথির প্রতিনিধি হিসাবে হাজির হন জনৈক প্রমোটার। যদিও ঐ প্রমোটার জমির দাবিদার হিসাবে কোনো কাগজ পত্রই দাখিল করতে পারেন নি। সবই পরে দেবেন বলে জানান।
ü তিনশ বেডের মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল ।ü সাধারণ মানুষের আয়ত্তের মধ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে আসা।ü চিকিৎসার সরঞ্জাম এবং ওষুধ তৈরীর কারখানা ।ü অফিসিয়াল লিক্যুইডেটর স্বীকৃত শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা মিটিয়ে দেওয়া।ü RNTCP, NPCB, RSBY, জননী সুরক্ষা প্রকল্প, টিকাকরণ এবং অন্যান্য সরকারি প্রকল্পের সঠিক রূপায়ণ।ü রোগ প্রতিকারের সঙ্গে সঙ্গে রোগ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা প্রচার ও প্রসার।ü সঠিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের কার্যক্রম গ্রহণ।
আহ্বায়করা ছিলেন ডাঃ নীলমণি ঘোষাল(চিকিৎসক), ডাঃ শ্যামল চ্যাটার্জী(চিকিৎসক), ডাঃ শীতল চ্যাটাজী(চিকিৎসক) শ্রী শঙ্কর সান্যাল(সভাপতি, সর্বভারতীয় হরিজন সেবক সংঘ) শ্রী প্রণব শূর (পরিবেশবিদ), শ্রী দিলীপ ঘোষ (সমাজসেবী, ক্রীড়াসংগঠক ও প্রাক্তন ক্রীড়াবিদ) শ্রী মলয় সেনগুপ্ত (প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি), শ্রীমতী সুনন্দা সিকদার (আনন্দ পুরস্কার প্রাপ্ত লেখিকা) শ্রী সরল দে(সাহিত্য একাডেমি ও বিদ্যাসাগর পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি) শ্রী বারিদ বরণ ঘোষ (গবেষক, সভাপতি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ) পন্ডিত মানিক সান্যাল (সংগীত শিল্পী), শ্রী চন্ডিদাস মাল (সংগীত শিল্পী), শ্রী সত্যজিৎ চ্যাটার্জী, (প্রাক্তন ভারতীয় ফুটবল অধিনায়ক) শ্রীমতী উর্মিলা ছেত্রী (প্রখ্যাত সাঁতারু), শ্রী সুকান্ত সরকার(সাংবাদিক), শ্রীমতী সঙ্ঘমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় (শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার প্রাপ্ত বিজ্ঞানী)
১ জানুয়ারি ২০১৫ - শ্রমজীবী হাসপাতালের(শ্রীরামপুর) নিজস্ব হিস্টোপ্যাথলজি ইউনিট-এর উদ্বোধন করা হল। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসর ডাঃ ডি পি চৌধুরী, ডাঃ ডি. কে মন্ডল, ডাঃ অনুপ মজুমদার, ডাঃ করবী স্যানাল, ডাঃ অনিল সাহা, শ্রী ফণিগোপাল ভট্টাচার্য, শ্রী জয়পাল নন্দী, শ্রী শংকর সেন, শ্রী শংকর ঘোষ, শ্রীঅতীশ বোস সহ শ্রমজীবী পরিবারের সদস্য বৃন্দ। প্রসঙ্গত হিস্টোপ্যাথলজির প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি শ্রমজীবী হাসপাতালকে দেন ডাঃ ডি. পি. চৌধুরী। অনুষ্ঠানে ক্যানসার সচেতনতার উপর বক্তব্য রাখেন তিনি। ডাঃ অনিল সাহা তাঁর বক্তব্যে ডাঃ চৌধুরীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন- হিস্টোপ্যাথলজি বিভাগ হাসপাতালেই চালু হয় যাতে সাধারণ মানুষই উপকৃত হবেন।
১৫ই ফেব্রুয়ারী ২০১৫ - বৈকাল ৩টায় বেলুড় লালবাবা কলেজ প্রাঙ্গণে এক নাগরিক কনভেনশানের আয়োজন করা হয়। ঐ কনভেনশানে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন বিচারপতি মলয় সেনগুপ্ত, আনন্দ পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখিকা শ্রীমতী সুনন্দা শিকদার, মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সম্পাদক কিরীটি রায়, শ্রমজীবী হাসপাতালের সম্পাদক ডাঃ অনিল সাহা, কার্যকরী সভাপতি ফণিগোপাল ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট সাংবাদিক সুকান্ত সরকার, প্রখ্যাত ফুটবলার সত্যজিৎ চ্যাটার্জী প্রমুখ । নাগরিক কনভেনসান সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ইন্দোজাপান এর খাস জমিতে শ্রমজীবী হাসপাতাল সম্প্রসারণের প্রশ্নে স্থানীয় মানুষের মতামত সংগ্রহ করা হবে। এ কনভেনশানের পরে “বিক্রম ও আদালত" নাটকটি মঞ্চস্থ করে রঙ্গলোকের বন্ধুরা। বহু মানুষের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
২০ মার্চ ২০১৫ - অবশেষে ইন্দো-জাপান স্টিলস্ লিমিটেড এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন, শ্রমজীবী হাসপাতাল, শ্রমজীবী হাসপাতাল সহযোগী মঞ্চ এবং আপামর সাধারণ মানুষের সক্রিয় আন্দোলনের ফলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ল্যান্ড এন্ড ল্যান্ড রিফর্মস ডিপার্টমেন্টের ও এস ডি এণ্ড ইও এস সিএস এণ্ড এল আর সি মি: এ কে সিং এর নির্দেশে সরকার ৪.৬০৬ একর জমিকে ৬ (৩) আইন মোতাবেক অধিগ্রহণ করার নির্দেশ জারি করে গত ২০.৩.২০১৫ তারিখে । এ নির্দেশে মি: এ কে সিং গ্র্যান্ড স্মিথির পক্ষে দাঁড়ানো প্রমোটার যতন পারেখ-এর দাবী নসাৎ করে বলেন "...In view of the above facts and the fact that the factory is closed since 1995 and it is not utilised for the purpose for which it was allowed retention ; 4.606 acres of land is resumed from M/s Grand Smithy Works u/s 6(3) of WBEA Act ..."দাবী আদায়ের লক্ষ্যে এই নির্দেশ অবশ্যই শ্রমজীবী হাসপাতালকে এক কদম এগোতে সাহায্য করবে। কিন্তু পথ এখনও অনেকটাই বাকী। এ জমিতে শ্রমজীবী হাসপাতাল সম্প্রসারণের দাবীতে আমাদের সচেতন আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।শ্রমজীবী হাসপাতাল বিশ্বাস করে সকল কাজে অতীতের মতোই সকলকে পাশে পাবে।৪ঠা মে ২০১৫ - বীরভূমের সঙ্গে শ্রমজীবী হাসপাতালের আত্মীয়তার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের । ২০০৫ সালে 'হৃদয় ছুঁয়ে' উদ্যোগের সময় আমরা বহুবার বোলপুরে গিয়েছি, বহু মানুষের সক্রিয় সহযোগিতায় 'হৃদয় ছুঁয়ে' প্রকল্প সফল হয়েছে।পরবর্তীকালেও যোগাযোগ, মতামতের আদান প্রদান ছিল অব্যাহত। বীরভূমে কিছু করা যায় কিনা, অন্তত: একটি বহির্বিভাগ - এ নিয়ে একাধিকবার আমরা আলোচনা বসেছি।গত ৪ মে আশার আলো দেখিয়েছেন পেশায় আইনজীবী তথা সমাজসেবী সিউড়ীর বাসিন্দা স্বপন কুমার রুজ। উনি ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন কোপাই এলাকায় তার পারিবারিক ১০০ বিঘা জমিতে শ্রমজীবী হাসপাতাল গড়ে তোলবার। বস্তুত এই হাসপাতালটি গড়ে তুলতে পারলে বীরভূমের স্বাস্থ্যমানচিত্রে এক উজ্জ্বল পরিবর্তন ঘটবে। বহু সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন। হাসপাতাল গড়ে তোলার প্রাথমিক লক্ষ্যকে সামনে রেখে সম্প্রতি বোলপুরের মারওয়ারি ধর্মশালায় একটি আলোচনা সভা হয়। সভায় উপস্থিত বিশ্ব ভারতীর শিক্ষক ও বীরভূমের শ্রমজীবী হাসপাতালের অন্যতম উদ্যোক্তা কিশোর ভট্টাচার্য্য বলেন - “অনেক দিন ধরেই এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করার কথা ভাবা হচ্ছিল। তবে, সে রকম সুযোগ আসেনি। স্বপনবাবু উদ্যোগী হয়েছেন। শ্রমজীবী হাসপাতাল গড়ে তোলার জন্য জমি দেওয়ার কথা অঙ্গীকার করেছেন। ওই হাসপাতাল গড়ে উঠলে শুধু বীরভূমই নয়, আশপাশের এলাকার অসংখ্য মানুষের উপকার হবে।” যেহেতু একসঙ্গে অনেকটা জমি পাওয়া গেছে তাই ভবিষ্যতে এখানে পশু খামার ও কৃষি খামার গড়ে তোলার পরিকল্পনা আমাদের আছে।পরবর্তীকালে গত ২৪ শে মে ২০১৫ কোপাই এ গ্রাম থেকে প্রায় ২০ জন মানুষ শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে আসেন, চলে সারাদিন ব্যাপী আলোচনা, শ্রমজীবী হাসপাতাল ঘুরে দেখে ওঁরা বুঝবার চেষ্টা করে কিভাবে চলে শ্রমজীবী হাসপাতাল।৫ই জুন ২০১৫ - বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউট অফ্ এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট(VIEM), শ্রমজীবী বিদ্যালয় এবং শ্রমজীবী হাসপাতালের যৌথ উদ্যোগে শ্রমজীবী হাসপাতালে আন্তর্জাতিক পরিবেশ দিবস পালন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে শ্রমজীবী বিদ্যালয়ের ছাত্র -ছাত্রীরা তাদের বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা পত্র পাঠ করে, বিভিন্ন বক্তা বক্তব্যে রাখেন। বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা সংগীত পরিবেশন করেন।
২৭শে জুন ২০১৫ - 'বোলপুর- শান্তিনিকেতন' তারপর 'প্রান্তিক' তারপর'কোপাই' রেলষ্টেশন। এই রেলস্টেশন থেকে মাত্র চার কিলোমিটার হাঁটলেই চাঁদপুর গ্রাম, লালমাটি, লাল পলাশ আর কোপাই নদীর মিষ্টি সহাবস্থান। এই গ্রামে ২৭ শে জুন ২০১৫ তারিখে শ্রমজীবী হাসপাতালের প্রথম সাপ্তাহিক বহির্বিভাগ শুরু হল। চাঁদপুর ও তার পাশাপাশি গ্রামের মানুষদের সহায়তায় ও উদ্যোগে এখানে শ্রমজীবী হাসপাতাল তৈরীর লক্ষ্যে এই বহির্বিভাগ চালু করা হয়েছে। শ্রমজীবী পরিবারের সদস্য ও বন্ধুরা এবং স্থানীয় গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়ে গান, কবিতা, আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে এই সাপ্তাহিক বহির্বিভাগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।২৩ শেআগস্ট ২০১৫ - বীরভূমের কোপাই এর চাঁদপুর গ্রামে নূতন শ্রমজীবী হাসপাতাল তৈরীর পরিকল্পনা হয়। সেখানে হাসপাতাল সংলগ্ন জমিতে জৈবচাষ, পশু খামার ও মৎস্য পালন-এর পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেই উদ্দেশ্যে প্রস্তাবিত হাসপাতালের জমি সংলগ্ন একটি পুকুরে মাছ ছাড়া হয়। ২৩ শে আগষ্ট স্থানীয় মানুষদের নিয়ে লোকসঙ্গীত ও আদিবাসী সংগীত নৃত্যের মাধ্যমে জমজমাট দিনটি কাটাই আমরা। শ্রমজীবী বিদ্যালয়ের সকল পড়ুয়াদের সাথে, 'শান্তিনিকেতন'-এর ছাত্রছাত্রীদের মিলিত উৎসবে মুখর হয়ে ওঠে দিনটি।
১৮ই সেপ্টেম্বর ২০১৫ - শ্রীমতী শাশ্বতী ব্যানার্জী তাঁর প্রয়াত স্বামী কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি প্রবুদ্ধ শঙ্কর ব্যানার্জীর স্মৃতিতে শ্রমজীবী হাসপাতালে দশ লক্ষ টাকা দান করেছেন। ১৬ই আগষ্ট হাসপাতালের বার্ষিক সাধারণ সভায় উপস্থিত থেকে এই অর্থমূল্যে তিনি শ্রমজীবী হাসপাতালের সভাপতির হাতে তুলে দেন এবং এই অর্থমূল্যে হাসপাতালের কিডনি সংক্রান্ত চিকিৎসার কাজে ব্যয় করবার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। সেইমত ২৩শে সেপ্টেম্বর ২০১৫ প্রবুদ্ধ শঙ্কর ব্যানার্জীর তৃতীয় প্রয়াণ বার্ষিকীর দিনটিতে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের ডায়ালিসিস - ইউনিটটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়,তার নামাঙ্কিত স্মৃতি ফলকটি উন্মোচন করে। শ্রমজীবী পরিবারের সকল সদস্যদের সাথে শ্রীমতী শাশ্বতী ব্যানার্জীর আত্মীয় ও বন্ধুরাও এদিন উপস্থিত ছিলেন।
১৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ - ভাল আছেন বেলুড়ের বাঞ্চারাম টিকাদার। তাঁর বয়স ১০২। বেলুড় শ্রমজীবীতে তার কোমরের অপারেশন হয়। অতি প্রবীণ মানুষটি হাসাপাতালের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে শুভ কামনা জানিয়েছেন।
৬ই নভেম্বর ২০১৫ - বালী দেওয়ানগাজী রোডের তিন মহীয়সী কন্যা সাবিত্রী বিশ্বাস (মিশ্র), সবিতা মিশ্র এবং সরস্বতী মিশ্র শ্রমজীবী হাসপাতালকে শ্রমজীবী পাঠশালা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে দান করেন প্রায় ৩ কোটি টাকার ভূ-সম্পত্তি। যে জমিতে বর্তমানে গড়ে উঠছে শ্রমজীবী পাঠশালার পাঁচতলা ভবন। প্রসঙ্গত এই প্রয়াসে হাওড়া কপোঁরেশনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন, জমিতে থাকা পুকুরটির আমূল সংস্কার ও পাড় নিমাণে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। ভূমি ও রাজস্ব দপ্তর প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা রেজিষ্ট্রেশন ফি মুকুব করে দেয়।
১৩ই মার্চ ১৬ - শ্রমজীবী পাঠশালা, শ্রমজীবী পরিবারের আরও এক উদ্যোগ“শ্রমজীবী পাঠশালা - এক বহুমুখী শিক্ষাকেন্দ্র” গড়ে তোলার কাজ শুরু হল বালির দেওয়ানগাজীতে মিশ্র পরিবারের দান কার জমিতে। শ্রমদান ও নানান ধরণের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম অনুষ্ঠানকে বর্ণময় করে রাখে।“চল কোদাল চালাই” এর মধ্য দিয়ে- নির্মাণের সূচনা হয়। শ্রমজীবীর ছাত্রছাত্রী, কর্মী ও সহযোগীরা সমস্ত দিন নানান অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সভাকে প্রাণবন্ত রাখে।
মার্চ ২০১৬ - ব্লাড ব্যাঙ্ক গড়ে তোলার ভাবনা চিন্তা শ্রমজীবীর অনেকদিনের। শ্রমজীবী শ্রীরামপুরে পরিকাঠামো নির্মাণ শুরু হল। প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ও যন্ত্রপাতির জন্য প্রয়োজন ৯৭ লক্ষ টাকা । এই টাকা সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করতে বালি অ্যাথলেটিক ক্লাবের সভা ঘরে এক ঘরোয়া সবার আয়োজন করা হয় শ্রমজীবী সহযোগী মঞ্চের উদ্যোগে।ডাঃ অনিল সাহা ব্লাড ব্যাঙ্কের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে দীর্ঘ সময় শ্রোতাদের বোঝান। কিভাবে এক ইউনিট রক্ত চারজনকে দেওয়া যায় কম্পোনেন্ট সেপারেশন করে তারও ব্যাখ্যা করেন। শ্রমজীবী শ্রীরামপুরে ব্লাড ব্যাঙ্ক ও বেলুড়ে স্টোর রাখতে পারলে হুগলী-হাওড়া ও আশপাশের মানুষের পক্ষে সহজেই হাসপাতালে রক্ত উপলব্ধ হবে।অরুণজিৎ সিনহা, কানুপ্রিয় ব্যানার্জী, অলোক জানা, সমীর কাড়ার, দ্বিজেন ভট্টাচার্য, বাবু মুখার্জী বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষে অর্থ সংগ্রহে ভূমিকা রাখবেন বলে বক্তব্য রাখেন। সংগ্রহ প্রসঙ্গে বলেন আমরা এক হাজার টাকা সাহায্যের বিনিময়ে একটি কার্ড চালু করব যে কার্ডে ১০বছর সময়ের মধ্যে ১ ইউনিট রক্ত পাওয়া যাবে। সাহায্যকারী যাকে ইচ্ছে এই কার্ড ব্যবহার করতে দিতে পারেন। সভাপতিত্ব করেন সাধন ব্যানার্জী।
২৩ শে এপ্রিল ২০১৬- কোপাই শ্রমজীবী হাসপাতাল চত্বরে সদ্য তৈরী সুন্দর একটা খড়ের চালার নীচে আদিবাসী নাচের মধ্য দিয়ে কৃষি কর্মশালা সূচনা হয়।
৪ এপ্রিল ২০১৬ - শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতাল চত্বরে গড়ে উঠেছে“শ্রমজীবী ইন্ডাস্ট্রিয়াল কো অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড”। আমাদের এই কো অপারেটিভ সরকারী রেজিস্ট্রেশন পেয়ে গেছে গত ৪ঠা এপ্রিল ২০১৬ তে।আমাদের এই কো অপারেটিভ সোসাইটিতে ফিনাইলের সাথে কাপড় কাচার গুঁড়ো সাবান, ও তরল সাবান, হাত ধোয়ার তরল সাবান, টয়লটে ক্লিনার, প্রিমিয়াম কোয়ালিটি লিকুইড ডিটারজেন্ট উৎপাদন হচ্ছে। আমরা প্রকৃত গুণমান বজায় রেখেই এই দ্রব্য প্রস্তুত করছি। শ্রমজীবী সহযোগীদের কাছে শ্রমজীবীর প্রস্তুত দ্রব্য সাদরে গৃহীত হবে আশা করা যায়।শ্রমজীবী কো অপারেটিভের উদ্বৃত্ত অর্থ শ্রমজীবীর আবাসিক ছাত্রদের জন্য ব্যবহৃত হ্বে।
২১ শেজুন ২০১৬ - শ্রমজীবীর যৌথ ভাবনার আদালত স্বীকৃতি: একটি মামলা ।মামলাটির প্রেক্ষাপট - মহিলার শ্লীলতাহানি, দাঙ্গা মারপিট -খুন। আদালত - মহামান্য কলকাতা হাইকোর্ট । বিচারান্তে ধৃত অসামীদের সাজা যাবজ্জীবন কারাদন্ডের। সময়ান্তরে পুনর্বিচারের আবেদন আসামীদের তরফে । আসামীদের মধে একজন ধনঞ্জয় দাস। ঘটনা যখন ঘটে তখনও সে সাবালক নয়। পুনর্বিচারকালে সে সাবালকত্বের সীমা অতিক্রান্ত । মাননীয় বিচারপতি সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় ও রাজীব শর্মা-এর বিচারে তার শাস্তি মকুব করে সংশোধনের সিদ্ধান্ত - কোনও প্রকৃত কম্যুনিটি সেন্টারের পর্যবেক্ষণে রেখে। সেই লক্ষ্যে বিচারপতিরা তাদের রায়ে জানিয়েছেন - ধনঞ্জয়কে বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালে রেখে বিনা বেতনে থাকা খাওয়ার সুযোগ দিয়ে হাসপাতাল পরিস্কার রাখার কাজের মধ্য দিয়ে তাকে সংশোধনের অবকাশ দেওয়া হোক। মানুষের জান্তব প্রবৃত্তি নিবারণে মানবিক যৌথ কর্মকান্ডের প্রেরণার উৎস হিসাবে অপরিচিত বিচারপতিদের শ্রমজীবী হাসপাতালকে বেছে নেওয়া অবশ্যই একটি ব্যতিক্রমী নজীর।এই রায়কে সম্মান জানাই। আস্থা রাখি - যৌথ ভাবনার অন্যতম পথিকৃত হিসাবে শ্রমজীবী ভাবনা আরও দূর দূরান্তে প্রসারিত হবে।(মামলারReference -- C.R.A No. 218 of 2009 । পুনর্বিচারের রায়ের তারিখঃ ২১/০৬/ ২০১৬)
৪ঠা ডিসেম্বর ২০১৬ - এসো সুস্থ গ্রাম গড়ি : শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের উদ্যোগে “এসো সুস্থ গ্রাম গড়ি” র এক পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা স্থানীয় সদস্যদের উচ্চতা, প্রেসার, সুগার মেপে দিয়ে আগাম রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা বোঝান। ২৬ শে জানুয়ারী ৭ম মিলন উৎসবের দিন শেওড়াফুলি রাজমাঠ থেকে সাইকেল মিছিল সচেতনতার বার্তা নিয়ে পৌঁছয় বড়বেলু গ্রামে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে । 'এসো সুস্থ গ্রাম গড়ি' আহ্বান সম্পূর্ণ হয় স্থানীয় গ্রামের মানুষকে ৪০০ শ্রমজীবী বৃক্ষ বিতরণের মধ্য দিয়ে। যে বৃক্ষ আগামী দিনে গ্রামকে আরও সবুজ করে তুলবে।১২ইজানুয়ারী ২০১৭ - বেলা ১২টায় সময় বোলপুর স্টেশন চত্বর থেকে কোপাই শ্রমজীবী হাসপাতালের উদ্যোগে এক বর্ণাঢ্য প্রচার মিছিল শুরু হয়। মিছিলে পথ নিরাপত্তার প্রচার নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনও সামিল হয়। “স্বাস্থ্যের জন্য হাটুন" মিছিল দীর্ঘ পথ পরিক্রমা করে রতন কুঠির মাঠে শেষ হয়।
১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭ - শ্রীরামপুর শ্রমজীবীতে চালু হল নিউজ পেপার ব্যাঙ্ক
২১ জানুয়ারি, ২০১৮ - বন্ধ ইন্দোজাপান কারখানার খাসজমিতে শ্রমজীবী হাসপাতাল সম্প্রসারণের দাবিতে অনুষ্ঠিত হল নাগরিক কনভেনশন।
হাসপাতাল সম্প্রসারণের লক্ষ্যে গত ২০১৩ সালেই গড়ে ওঠে শ্রমজীবী হাসপাতাল সহযোগী মঞ্চ। এ মঞ্চের উদ্যোগে নাগরিক কনভেনশনে বালি-বেলুডের আপামর সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বক্তব্য রাখেন সিকিম হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি শ্রী মলয় সেনগুপ্ত, বেলুড় লালবাবা কলেজের অধ্যক্ষ শ্রী সঞ্জয় কুমার, আনন্দ পুরস্কার প্রাপ্ত লেখিকা শ্রীমতী সুনন্দা শিকদার এবং পৌরপ্রতিনিধি হিসাবে ছিলেন শ্রী প্রাণকৃষ্ণ মজুমদার, শ্রী বলরাম ভট্টাচার্য ও শ্রীমতী চৈতালী বিশ্বাস। বক্তারা সকলেই একবাক্যে শ্রমজীবী হাসপাতাল সম্প্রসারণের দাবিতে খাস জমি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন।ইন্দোজাপান স্টীলস্ লিমিটেড এমপ্রয়িজ ইউনিয়ানের সম্পাদক ফণিগোপাল ভ্রাচার্য্য বলেন - কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ৬/৩ ধারা অনুযায়ী জমি স্বাভাবিক নিয়মেই খাস হয়ে যায়। কিস্তু স্থাবর সম্পত্তির ক্রেতা জনৈক প্রমোটার এ জমিতে বহুতল গড়ে তলোর ষড়যন্ত্র করেন। ইন্দোজাপানের লড়াকু শ্রমিকরা এ অসৎ উদ্দেশ্য বান্চাল করে দিয়ে গড়ে তোলে হাসপাতাল সম্প্রসারণের দাবিতে আন্দোলন, কিন্তু এ প্রমোটার ল্যান্ড ট্রাইবুনালে ব-কলমে মামলা দায়ের করে। মামলা এখনও বিচারাধীন। এই অবস্থায় বালি-বেলুড়ের সাধারণ নাগরিকরা এ কনভেনশনে সরকারের কাছে দাবি করেন অবিলম্বে খাসজমিতে শ্রমজীবী হাসপাতাল সম্প্রসারণের যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার। প্রসঙ্গত এ জমির একাংশেই বর্তমানে শ্রমজীবী হাসপাতাল অবস্থিত। এবং ইন্দোজাপান কারখানার শ্রমিকরাই শ্রমজীবী হাসপাতাল গড়ে তোলেন। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন শ্রমজীবী হাসপাতাল সহযোগী মঞ্চের আহ্বায়ক সাধন কুমার ব্যানার্জী।
১লা জুলাই ২০১৭ - ব্যারাকপুর সংহতি ওয়েল ফেয়ার সোসাইটির প্রাঙ্গণে শুরু হল ব্যারাকপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের পথচলা । ঐ দিন সকালে একটি বর্ণাঢ্য প্রভাতফেরী ব্যারাকপুরের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে এসে সূচনা করে ব্যারাকপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের। ফিতে কেটে উদ্বোধন করেন শ্রমজীবী হাসপাতালের কার্যকরী সভাপতি ফণীগোপাল ভট্টাচার্য্য । বহু গুণী মানুষদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক ভগীরথ মিশ্র, নাট্যকার চন্দন সেন সহ ব্যারাকপুর অঞ্চলের বহু বিশিষ্ট মানুষ । অনুষ্ঠিত হয় নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে বৃক্ষ রোপনও করা হয়।
১লা জুলাই ২০১৭ - সাঁকরাইল শ্রমজীবী হাসপাতালের পথ চলা শুরু হয়। বিকেলে প্রয়াত সুমন পালের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন সূচনা হয় পথ চলা । গান, পাঠ ও কথার মধ্য দিয়ে সুমন পাল মেমোরিয়াল সাঁকরাইল শ্রমজীবী হাসপাতালের উদ্বোধন হয়।উদ্বোধন করেন শ্রমজীবী হাসপাতালের কার্যকরী সভাপতি ফণী গোপাল ভট্টাচার্য ।
১৩ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৮ - সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি উদ্যোগ ও শ্রমজীবী মন পত্রিকার উদ্যোগে শ্রীরামপুর টাউন হলে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ শিল্পীগোষ্ঠী উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর শ্রুতিআলেখ্য“ভালোবাসা ও প্রশান্তির পৃথিবী” পরিবেশিত হয়। এছাড়াও এই বাংলার পৌলবী গুপ্ত, শিল্পী ঘোষ ও ইচ্ছে ঘোড়ার শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। দুই বাংলার মিলিত এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হুগলী জেলায় বিপুল প্রশংসিত হয়।
Copyright © 2024 SRAMAJIBI Hospital . - All Rights Reserved.
We use cookies to analyze website traffic and optimize your website experience. By accepting our use of cookies, your data will be aggregated with all other user data.